TL;DR
"মেটাভার্স" শব্দটি সম্মিলিত ভার্চুয়াল স্পেসকে বর্ণনা করে যেখানে আমাদের ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল জগত লীন হয়ে যায়। ধারণাটি বিজ্ঞান কল্পকাহিনী উৎসাহীদের মনকে যুগ যুগ ধরে প্রভাবিত করে চলেছে। তবে, এটি মাত্র কিছুদিন হলো প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং ইন্টারনেটের বিস্তারের সাথে সাথে বাস্তবে পরিণত হওয়ার ইঙ্গিত দেখাতে শুরু করেছে। মেটাভার্সে ব্লকচেইন প্রযুক্তির ভূমিকাও ক্রমবর্ধমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কারণ এটি একটি বিকেন্দ্রীকৃত এবং নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্য অবকাঠামো প্রদান করে যার উপর এটি তৈরি করা যাবে।
ভূমিকা
সাই-ফাই বিশ্বে "মেটাভার্স" শব্দটি প্রথম 90-এর দশকের গোড়ার দিকে তৈরি হয়। এরপর থেকে সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের কারণে একটি মেটাভার্সের ধারণা বিকশিত হয়। এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক উভয় কার্যকলাপের জন্য একটি সম্ভাব্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ক্রমবর্ধমান মনোযোগ অর্জন করেছে।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির উত্থানও মেটাভার্সের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিকেন্দ্রীভূত ও ইমার্সিভ ভার্চুয়াল বিশ্ব তৈরি করতে এই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে অনেক প্রজেক্ট ইতোমধ্যেই এটি ব্যবহার করে দেখেছে। এই নিবন্ধে মেটাভার্সের একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস পাওয়া যাবে এবং এর বিবর্তনে ক্রিপ্টোর ভূমিকা অন্বেষণ করবে।
মেটাভার্স সংজ্ঞায়িত করা
মেটাভার্সের সম্পূর্ণ রূপরেখা এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে, সাধারণ ধারণা হলো এটি একটি ভার্চুয়াল স্থান যা আমাদের ডিজিটাল ও বাস্তব-বিশ্বের জীবনকে সংযুক্ত করে। কেউ কেউ এটিকে ইন্টারনেটের পরবর্তী বিবর্তন বলে থাকে যা অনলাইন অভিজ্ঞতাকে ইন্টারেক্টিভ এবং ইমার্সিভ করে তুলবে।
মেটাভার্সকে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন কারণ এটি কেবল একটি পণ্য, পরিষেবা বা প্রজেক্ট নয়। তার চাইতেও বেশি কিছু। এটি ইন্টারনেট, অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR), ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR), কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), 3D পুনর্গঠন এবং ইন্টারনেট অব থিংসের (IoT) মতো বিভিন্ন প্রযুক্তিকে একত্রিত করে।
"মেটাভার্স" শব্দটি উদ্ভূত হওয়া বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে এটি একটি অত্যন্ত ইমার্সিভ এবং ইন্টারেক্টিভ ভার্চুয়াল বিশ্ব হিসেবে চিত্রিত হয়েছে। এই ধারণাটিকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য আজ ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে।
Web3 আন্দোলন দেখিয়েছে যে মেটাভার্স শুধুমাত্র সাই-ফাই ঘরানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং এটি এমন কিছু যা হয়ত ইতোমধ্যেই বিদ্যমান রয়েছে। Web3 এমন একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করছে যা ডেভলপারদেরকে মেটাভার্সের মতো বিকেন্দ্রীভূত অ্যাপ্লিকেশন (DApps), যেমন প্লে-টু-আর্ন (P2E) গেম তৈরি করতে উৎসাহিত করে। অ্যাক্সি ইনফিনিটি, দ্য স্যান্ডবক্স এবং ডিসেন্ট্রাল্যান্ডের মতো গেমগুলোতে ইতোমধ্যেই মেটাভার্সের বিভিন্ন দিক রয়েছে যা প্লেয়ারপদের জীবনের উপাদানকে অনলাইন জগতের সাথে সংযুক্ত করে।
মেটাভার্সের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ধারণা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি আমাদেরকে মেটাভার্সের ধারণার কাছাকাছি নিয়ে গেছে যা আমরা বর্তমানে বুঝতে পারছি। বিটকয়েন এবং ইথেরিয়াম তৈরির মাধ্যমে বাইনোকুলার ভিশনের ধারণা থেকে ফেসবুকের পুনঃব্র্যান্ডিং পর্যন্ত – মেটাভার্সের একটি গভীর ভিত্তি রয়েছে।
1838
আগেই যেমনটি বলা হয়েছে যে মানুষকে ডিজিটাল পরিবেশে প্রবেশ করাতে মেটাভার্স সম্ভবত VR প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। VR এর প্রথম দৃষ্টান্তটি 1838 সালে ঘটেছিল যখন বিজ্ঞানী স্যার চার্লস হুইটস্টোন একটি একক 3D চিত্র নির্মাণের ধারণা "বাইনোকুলার ভিশন" এর রূপরেখা দেন।
এই প্রাথমিক গবেষণাটি স্টেরিওস্কোপ বিকাশের দিকে পরিচালিত করে যেটি হলো এমন একটি প্রযুক্তি যেটি চিত্র তৈরি করতে গভীরতার বিভ্রম ব্যবহার করে — এই একই প্রযুক্তি VR হেডসেটগুলো আজ ব্যবহার করে থাকে।
1935
আমেরিকান সাই-ফাই লেখক স্ট্যানলি ওয়েইনবাউম পিগম্যালিয়নস স্পেক্টেকেলস বইটি প্রকাশ করেন যা পাঠকদের ভার্চুয়াল বাস্তবতার সম্ভাবনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। বইয়ের প্রধান চরিত্রটি এক জোড়া গগলস ব্যবহার করে একটি কাল্পনিক জগতে নিজেকে ডুবিয়ে ফেলে যা সকল মানুষের ইন্দ্রিয়ের অনুকরণ করে যা সেই বিশ্বকে বাস্তব বলে মনে করে।
1938
এটি প্রায়শই বলা হয় যে ফরাসি কবি এবং নাট্যকার আন্তোনিন আর্টাউড প্রথম "ভার্চুয়াল রিয়েলিটি" বা "la réalité virtuelle" শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি তার প্রবন্ধের সংগ্রহ, দ্য থিয়েটার অ্যান্ড ইটস ডাবল-এ এটি সম্পর্কে লিখেছেন, যেখানে তিনি থিয়েটারগুলো বিকল্প বিশ্ব তৈরি করতে কিভাবে চরিত্র, বস্তু এবং চিত্র মঞ্চস্থ করতে পারে সে সম্পর্কে বলেছেন।
1962
আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা মর্টন হেইলিগ এমন একটি মেশিন তৈরি করেছিলেন যেটি মানুষকে তারা অন্য জায়গায় মোটরসাইকেল চালাচ্ছে বলে অনুভূতি দেয়। সেন্সোরামা নামের ডিভাইসটি একটি চলমান আসন, ঘ্রাণ এবং 3D স্ক্রিননের মতো প্রভাবকে একত্রিত করে তার ব্যবহারকারীদের একটি ভিন্ন বাস্তবতায় ডুবিয়ে দেয়। যন্ত্রটি কখনই প্রোটোটাইপ পর্যায়ে না গেলেও এটি বিভ্রম এবং বাস্তবতার মধ্যে রেখাগুলোকে অস্পষ্ট করার সম্ভাবনা প্রদর্শন করে।
1984
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অগ্রগামী Jaron Lanier এবং Thomas G. Zimmerman VPL Research, Inc. প্রতিষ্ঠা করেন যেটি হলো VR হেডসেট এবং ডেটা গ্লাভস (বা তারযুক্ত গ্লাভস)-এর মতো VR পণ্য তৈরি ও বিক্রির প্রথম কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি।
1989
ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী টিম বার্নার্স-লি CERN-এ কাজ করার সময় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের প্রথম প্রস্তাব লিখেছিলেন। ওয়েবটি প্রাথমিকভাবে বিশ্বব্যাপী তথ্য শেয়ার করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
1992
নিল স্টিফেনসনের সাই-ফাই উপন্যাস স্নো ক্র্যাশ-এ মেটাভার্স প্রথম উল্লেখ করা হয়। আমেরিকান সাই-ফাই লেখক একটি ডিস্টোপিয়ান ভবিষ্যৎ বিশ্বকে চিত্রিত করেন যা মানুষকে আরো ভালো বিকল্প বাস্তবতায় যাওয়ার জন্য ডিজিটাল অ্যাভাটার ব্যবহার করার সুযোগ প্রদান করে।
1993
কম্পিউটার বিজ্ঞানী মনি নাওর এবং সিনথিয়া ডিওয়ার্ক ডিনায়াল-অব-সার্ভিস এবং নেটওয়ার্ক স্প্যামের মত পরিষেবার অপব্যবহার প্রতিরোধ করতে প্রুফ-অব-ওয়ার্ক (PoW) ধারণাটি উদ্ভাবন করেন। এটি পরিষেবা চাওয়া কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে কম্পিউটার প্রসেসিং সময়ের মত প্রুফ অব ওয়ার্ক চাওয়ায় অবাঞ্ছিত নেটওয়ার্ক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
2003
লিন্ডেন ল্যাব, সেকেন্ড লাইফ নামে মাল্টিমিডিয়া প্ল্যাটফর্ম চালু করে। সম্পূর্ণরূপে ইমার্সিভ না হলেও (কোনো গগলস বা গ্লাভস জড়িত নেই), ব্যবহারকারীরা তাদের কম্পিউটার ব্যবহার করে অন্বেষণ করতে, ইন্টারঅ্যাক্ট করতে এবং তৈরি করতে শেয়ার করা ভার্চুয়াল স্পেসগুলোতে সংযোগ করতে পারেন। সেকেন্ড লাইফকে একটি খেলা হিসেবে দেখা হয় না বরং একটি অনলাইন জমায়েতের জায়গা হিসেবে দেখা হয় যেখানে যেকেউ একটি নতুন ডিজিটাল উপস্থিতি তৈরি করতে পারে।
2006
Roblox কর্পোরেশন গেম প্ল্যাটফর্ম Roblox প্রকাশ করে যেটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন মাল্টি-প্লেয়ার গেম খেলতে পারে। উপরন্তু, ব্যবহারকারীরা তাদের নিজস্ব গেম ডেভলপ করতে পারে এবং অন্যরা খেলতে পারে। ব্যবহারকারীরা ফ্রি রোবক্স খেলতে পারলেও এটির একটি ইন-গেম স্টোর রয়েছে যেখানে খেলোয়াড়রা তাদের ভার্চুয়াল অর্থ ব্যয় করতে পারে, যাকে বলা হয় Robux।
2007
গুগল তার বিদ্যমান ম্যাপ পণ্যের যোগ করার জন্য স্ট্রিট ভিউ প্রকাশ করেছে। স্ট্রিট ভিউ দিয়ে মানুষ মানচিত্রকে বাস্তব জগতে পরিণত করতে পারবে — যেকেউ তাদের মোবাইল ডিভাইস বা কম্পিউটারে একটি রাস্তা দেখতে পারে যেমনটি বাস্তব জীবনে প্রদর্শিত হয়।
2009
সাতোশি নাকামোতো 2008 সালে প্রথম প্রধান বিকেন্দ্রীকৃত ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন ঘোষণা করেন। তারপর 2009 সালে তিনি প্রথম BTC মাইন করেন।
2012
উদ্যোক্তা পামার লুকি Oculus চালু করেছেন যা হলো একটি হেডসেট যার হার্ডওয়্যার ব্যবহারকারীদেরকে একটি 3D ভার্চুয়াল জগতে সংযুক্ত করতে পারে যেখানে তারা কাজ করতে, সামাজিকীকরণ করতে এবং বিনোদন উপভোগ করতে পারে। জনসাধারণের জন্য প্রযুক্তি স্কেল করতে দুই বছর পর 2014 সালে ফেসবুক ওকুলাস কিনে নেয়।
2014
কেভিন ম্যাককয় এবং অনিল দাশ প্রথম নন-ফাঞ্জিবল টোকেন (NFT) কোয়ান্টাম তৈরি করেন যাতে একটি পিক্সেলেড অষ্টভুজের একটি চিত্র ছিল। Namecoin ব্লকচেইনে মিন্ট হওয়া এটিকে NFT বলা হয়নি। বরং "মনেটাইজ করা গ্রাফিক্স" হিসেবে ধারণা করা হয়।
2015
ভিটালিক বুটেরিন 2013 সালে ইথেরিয়াম: The Ultimate Smart Contract and Decentralized Application Platform নামের ব্লগপোস্টে ইথেরিয়ামের আইডিয়ার প্রস্তাব করেন। বিকেন্দ্রীভূত কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম ইথেরিয়াম তারপর 2015 সালে চালু হয়। ইথেরিয়াম ডেভেলপারদের স্মার্ট চুক্তি ব্যবহার করে DApps তৈরি করতে তাদের নিজস্ব কোড নিয়ে পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়।
2016
2016 সাল ছিল ডিসেন্ট্রালাইজড স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা (DAOs) এবং Pokémon GO উভয়ের অস্তিত্বের বছর। প্রথম DAO-কে সহজভাবে The DAO বলা হয়। এটি ইথেরিয়ামে একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চালু করা হয়েছিল যার লক্ষ্য ছিল প্রতিটি সদস্য তার পরিচালনা পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
Pokémon GO যেটি বাস্তব জগতের একটি 3D মানচিত্রের সাথে সংযোগ করতে AR ব্যবহার করে। সর্বকালের অন্যতম সফল মোবাইল গেম হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র 2016 সালেই এটি বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক এবং বহুল ব্যবহৃত মোবাইল অ্যাপগুলোর মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে। বছরের শেষ নাগাদ এটি বিশ্বব্যাপী ডাউনলোড করা হয় 500 মিলিয়ন বার।
2021
ফেসবুক মেটাতে পুনঃব্র্যান্ড করায় মেটাভার্স একটি সাই-ফাই ধারণার চেয়ে আরো বাস্তব কিছু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলো। তারপর থেকে কোম্পানিটি মেটাভার্স-সম্পর্কিত অ্যাসেট যেমন মেটাভার্স কন্টেন্ট, সফ্টওয়্যার এবং VR ও AR হেডসেট ডেভলপ এবং অর্জনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
2022
ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেটাভার্স তৈরির জন্য সিমেন্স এবং NVIDIA একটি যৌথ অংশীদারিত্ব ঘোষণা করেছে। সহযোগিতাটি সিমেন্সের শিল্প অটোমেশন ও সফ্টওয়্যার, অবকাঠামো, বিল্ডিং প্রযুক্তি এবং পরিবহনের খ্যাতি এবং NVIDIA-এর এক্সিলারেটেড গ্রাফিক্স এবং AI-এর মর্যাদাকে কাজে লাগায়। সিমেন্সের সিইও এর মতে, সহযোগিতাটি হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যারকে সংযুক্ত করে একটি রিয়েল-টাইম, ইমার্সিভ মেটাভার্সকে সক্ষম করবে।
মেটাভার্সে ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোর ভূমিকা
মেটাভার্স ডেভেলপমেন্টে ব্লকচেইন প্রযুক্তি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রথমত, ব্লকচেইন মেটাভার্সে নিরাপদ এবং স্বচ্ছ লেনদেনের জন্য পরিকাঠামো প্রদান করতে পারে, যেমন দ্রুত এবং নিরাপদ ভ্যালু ট্রান্সফারের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি। দ্বিতীয়ত, ইথেরিয়ামের প্রকৃতি NFT তৈরি করে, যা মেটাভার্সে ইউনিক ভার্চুয়াল আইটেম উপস্থাপন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তৃতীয়ত, DApps মেটাভার্স পরিষেবা এবং কার্যকারিতাকে আরো বিকেন্দ্রীভূত করতে পারে তাই এটি কোনো একক সংস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না। এগুলো ব্যবহারকারীদেরকে তাদের ডেটা ও অ্যাসেটের মালিকানা নিতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম করতে পারে, যা নিরাপত্তা ও স্বায়ত্তশাসনের একটি লেভেল প্রদান করে যা প্রচলিত কেন্দ্রীভূত অ্যাপ্লিকেশনগুলো দিতে পারে না।
মেটাভার্স ডেভেলপমেন্টের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে VR এবং AR ইন্টারেক্টিভ ট্যুল যা ব্যবহারকারীদের ভার্চুয়াল বস্তুর সাথে ইন্টারঅ্যাক্ট করে এবং মেটাভার্স নেভিগেট করে ভার্চুয়াল জগতের অভিজ্ঞতা লাভ করার সুযোগ দেয়। এছাড়াও, এআই এবং প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণ মেটাভার্সের মধ্যে আরো বাস্তবসম্মত ও ইন্টারেক্টিভ অ্যাভাটার তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।
মেটাভার্সের ক্রমাগত বিকশিত হওয়ার পরিক্রমায় ব্লকচেইন ও ক্রিপ্টোর আরো বেশি বেশি ব্যবহার ক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মানুষজন কিভাবে যোগাযোগ করে এবং কিভাবে তারা মেটাভার্সে ব্যবসা পরিচালনা করে তা রূপান্তর করার সম্ভাবনা যেমন আছে সেভাবেই এগুলোর রয়েছে। বিকেন্দ্রীভূত, আস্থাবিহীন এবং স্বচ্ছ মিথস্ক্রিয়া সক্রিয় করার মাধ্যমে ব্লকচেইন এবং এর অ্যাপ্লিকেশনগুলো আরো বেশি উন্মুক্ত, নিরাপদ এবং দক্ষ মেটাভার্স তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।
মেটাভার্সের ভবিষ্যৎ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মেটাভার্সের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে, এর অগ্রগতিকে সমর্থন করার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও পরিষেবাগুলো এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, ভার্চুয়াল পরিবেশকে চালিত করে এমন প্রযুক্তিকে যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মত এবং আকর্ষণীয় হতে আরো অনেক উন্নত হতে হবে।
এছাড়াও রিয়েল টাইমে বিপুল সংখ্যক ব্যবহারকারীকে সাপোর্ট করতে পারে এবং একই সাথে ভার্চুয়াল অভিজ্ঞতা তৈরি ও শেয়ার করার ট্যুলস ও প্ল্যাটফর্মসহ মেটাভার্সের উচ্চ-গতির, কম-লেটেন্সির নেটওয়ার্ক প্রয়োজন। গোপনীয়তা, নিরাপত্তা, এবং গভর্নেন্স সংক্রান্ত সমস্যাও রয়েছে যা ডেভেলপারদেরকে অবশ্যই সমাধান করতে হবে যাতে করে মেটাভার্স সব ব্যবহারকারীর জন্য নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক স্থান হয়ে ওঠে।
উপরন্তু, মেটাভার্সের বৃদ্ধি সম্ভবত অগমেন্টেড রিয়েলিটি, AI, মেশিন লার্নিং, 3D ইঞ্জিন, ক্লাউড, এজ কম্পিউটিং এবং 5G সংযোগের মতো প্রযুক্তির আরো উদ্ভাবনের দ্বারা প্রভাবিত হবে। তাদের উন্নতির সাথে সাথে মেটাভার্স ক্রমবর্ধমানভাবে ইমার্সিভ ও বাস্তবসম্মত হয়ে উঠবে যা ব্যবহারকারীদেরকে এমন একটি ডিজিটাল বিশ্বের অভিজ্ঞতা দিবে যেটি অনুভূত হবে বাস্তবের মত।
ব্লকচেইন প্রযুক্তির জন্য মেটাভার্সই কিলার অ্যাপ হয়ে উঠবে কিনা তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তবে, ব্লকচেইন নিরাপদে ও স্বচ্ছভাবে লেনদেন রেকর্ড করতে এবং ডিজিটাল অ্যাসেট ও নতুন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে সক্ষম হওয়ায় এটি মেটাভার্সের বিকাশ ও পরিচালনার জন্য একটি উপযুক্ত পছন্দ হতে পারে।
শেষ কথা
মেটাভার্সের ধারণার শিকড় সাই-ফাইতে যার শুরু বই, টিভি এবং চলচ্চিত্রে অন্বেষণ করা একটি কাল্পনিক মহাবিশ্ব হিসেবে। তবে, প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে একটি ইমার্সিভ শেয়ার্ড ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের ধারণা ক্রমশই সম্ভবপর হয়ে উঠেছে।
ভার্চুয়াল লেনদেন ও মিথস্ক্রিয়াগুলোর জন্য একটি বিকেন্দ্রীভূত ও সুরক্ষিত প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির উত্থানও মেটাভার্সের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের চেনাজানা মেটাভার্স এখনও তার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও ডিজিটাল বিশ্বে আমরা কিভাবে বাস করি, কাজ করি এবং খেলি তা রূপান্তরিত করার জন্য বিপুল সম্ভাবনা এটির রয়েছে।