ট্রেডিং সাইকোলজি: কীভাবে আবেগের বশবর্তী না হয়ে ট্রেড করা যায়
হোম
নিবন্ধ
ট্রেডিং সাইকোলজি: কীভাবে আবেগের বশবর্তী না হয়ে ট্রেড করা যায়

ট্রেডিং সাইকোলজি: কীভাবে আবেগের বশবর্তী না হয়ে ট্রেড করা যায়

প্রকাশিত হয়েছে Feb 15, 2023আপডেট হয়েছে Apr 6, 2023
6m

TL;DR

ট্রেডিং সাইকোলজি একজন ট্রেডারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার মানসিক দিককে উপস্থাপন করে। প্রত্যেক ট্রেডারেরি নির্দিষ্ট পরিমাণে মানসিক ট্রিগার আছে। মূল দুটি আবেগ যা ট্রেডারদেরকে প্রভাবিত করে তা হলো ভয় এবং লোভ — দুটোই বাজে সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেমন কোনো অ্যাসেটের উপর সর্বস্ব ধরা বা ভয়ের কারণে আতঙ্কিত হয়ে বিক্রি করে দেওয়া। 

এমনকি কোনো ট্রেডার টেকনিক্যাল এবং ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিসে দক্ষ হলেও একটি দুর্বল বা উদ্বিগ্ন মন সহজেই আবেগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তাদের পোর্টফোলিওর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে — বিশেষ করে ক্রিপ্টোর মতো অস্থির ট্রেডিং পরিবেশে।

মার্কেট সাইকোলজি কী?

ট্রেডিং সাইকোলজি বলতে এমন মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলোকে বোঝায় যা ক্রিপ্টো বা স্টকের মতো মার্কেটে মানুষ কীভাবে ট্রেড করে তাকে প্রভাবিত করে। এটি এই ধারণার উপর ভিত্তি করে আছে যে একজন ট্রেডারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে আবেগ উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। 

উদাহরণস্বরূপ, লোভ একজন ট্রেডারকে একটি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চালিত করতে পারে, যেমন দ্রুত ক্রমবর্ধমান মূল্যের কারণে কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সির শীর্ষ মূল্যে ক্রয় করা। বিপরীতে, ভয়ের কারণে কোনো ট্রেডার সময়ের আগেই মার্কেট থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

কোনো অ্যাসেটের মূল্য তুলনামূলকভাবে স্বল্প সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলে FOMO বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়। এর কারণে কোনো ব্যক্তি মার্কেট বিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যুক্তি ও বুদ্ধির পরিবর্তে আবেগের উপর নির্ভর করতে পারে।

প্রত্যেক ট্রেডারই আবেগ দিয়ে প্রভাবিত হয়। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই অর্থ হারানো বেদনাদায়ক, আর অর্থ উপার্জন হয় আনন্দদায়ক। 

ট্রেড করার সময় আপনার মানসিকতা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ কেন

ভয় এবং লোভ ব্যবসায়ের দুটি মৌলিক আবেগ। 

ভয় কোনো ট্রেডারকে সকল ঝুঁকি এড়াতে চালিত করে সম্ভাব্য একটি ট্রেড মিস করিয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে, সর্বোচ্চ লাভের লোভ অত্যধিক ঝুঁকি গ্রহণের দিকে পরিচালিত করতে পারে, যেমন মূল্য দ্রুত বাড়ার কারণে কোনো অ্যাসেটকে সেটির সর্বোচ্চ মূল্যে কিনে ফেলা। 

অভিজ্ঞ ট্রেডাররা ভয় এবং লোভের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে জানেন। ভয় ট্রেডারদেরকে অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নেওয়া থেকে রক্ষা করে, আর লোভ সুযোগকে কাজে লাগাতে অনুপ্রাণিত করে। তবে উভয় আবেগের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা সাধারণত অযৌক্তিক ট্রেডিং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে পরিচালিত করে। 

সঠিক মানসিকতার সাথে ট্রেড করতে শেখা ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস সম্পাদন করা বা চার্ট কীভাবে পড়তে হয় তা জানার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের আবেগ বোঝা ও নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে ট্রেডাররা সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং ক্ষতি প্রশমিত করতে পারে।

তবে অবশ্যই আবেগের বশবর্তী হয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কথা বলা করার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। ট্রেডাররা প্রতিদিন বিভিন্ন ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যার ফলে আবগে সক্রিয় হতে পারে। কিছু উদাহরণ দেখা যাক।

  1. অবাস্তব প্রত্যাশা: ট্রেডিং একটি দ্রুত ধনী হওয়ার স্কিম নয়। যারা এই ধারণা নিয়ে ট্রেড করতে যান তাদের জন্য খুবই কঠিন বাস্তবতা অপেক্ষা করে। যেকোনো দক্ষতার মতোই ট্রেডিংয়ের জন্য বছরের পর বছর অনুশীলন এবং শৃঙ্খলা প্রয়োজন হয়।

  2. হারানো: এমনকি সেরা ট্রেডারদেরও বিষাদময় দিন থাকে। নতুন ট্রেডারদের জন্য ট্রেড হারানো মেনে নেওয়া কঠিন এবং প্রায়শই মার্কেট জয়ের প্রচেষ্ট আরো বেশি ব্যর্থ প্রচেষ্টার দিকে নিয়ে যায়।

  3. জয়: জয়কে ভালো মনে হলেও এর খারাপ দিক হলো ট্রেডাররা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বা নিজেকে অজেয় মনে করার অনুভূতি এবং তারা হারবে না এমন ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে। এর ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত এবং শেষ পর্যন্ত লোকসানের দিকে নিয়ে যেতে পারে। 

  4. মার্কেট সেন্টিমেন্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়া: নতুন ট্রেডাররা ইন্টারনেটে মানুষজন যা বলে তা দিয়ে সহজেই প্রভাবিত হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে নেতিবাচক অনুভূতি ভয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যার ফলে আতঙ্কিত হতে বিক্রি করে দিতে পারে। আবার কোনো ট্রেডারের পক্ষে কোনো নির্দিষ্ট টোকেন কেনার জন্য কনো ইনফ্লুয়েন্সারের পরামর্শ অন্ধভাবে অনুসরণ করাও সমানভাবেই বুদ্ধিহীনতার পরিচয় হবে, বিশেষ করে ইনফ্লুয়েন্সারকে যদি টোকেন প্রজেক্ট স্পনসর করে এবং এটির প্রমোশনের জন্য পে করে।

ট্রেডিং সাইকোলজি একজন ভালো ট্রেডার হওয়ার জন্য কীভাবে ব্যবহার করবেন

দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করুন

অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আপনি যা অর্জন করতে চান তার একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা করলে অবাস্তব প্রত্যাশার কারণে অতিরিক্ত লেনদেন করা বা অত্যধিক আবেগপ্রবণ হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে। এটি স্বল্পমেয়াদী লাভ বা ক্ষতির পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে আপনার ফোকাস রাখতে সহায়তা করবে।

বিরতি নিন 

নিয়মিত বিরতি পরিস্থিতি বুঝতে অনেক প্রয়োজনীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্পষ্টতা প্রদান করতে পারে। ধারাবাহিকভাবে জিততে থাকলে ওভারট্রেডিং হয়ে যাওয়ার আগেই ধীর হয়ে যান। উপরন্তু, সারা রাত কাজ করতে থাকলে আপনি দুর্বল হয়ে যাবেন এবং ফলস্বরূপ, খারাপ সিদ্ধান্ত নেবেন। বিরতি শুধুমাত্র আপনার পোর্টফোলিওর জন্যই নয়, আপনার নিজের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্যও উপকারী।

ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন

ট্রেড করার সময় সবাই ভুল করে। নিজের উপর রাগ বা তার চাইতেও খারাপ কিছু হওয়ার পরিবর্তে আরো বেশি পুঁজি দিয়ে আপনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন, ফিরে যান এবং কী ভুল হয়েছে তা বিশ্লেষণ করুন। আপনি আগের ভুলগুলো থেকে যা শিখবেন তার উপর ভিত্তি করে নতুন কৌশল প্রয়োগ করুন, তাহলে পরের বার আপনি আরো প্রস্তুত থাকবেন। 

নিয়ম সেট করুন  

একটি বিস্তারিত ট্রেডিং প্ল্যান তৈরি করে সেটিতে লেগে থাকুন। এই পরিকল্পনাটি আপনি কীভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তার রূপরেখা দেবে এবং চাপের সময় আপনার প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। কিছু উদাহরণের মধ্যে রয়েছে স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট ব্যবহার করা যা একদিনে আপনি কী পরিমাণ অর্থ লাভ বা হারাতে পারবেন তা সীমিত করবে এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল যেটিতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। 

একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা মাথায় থাকলে আপনার সিদ্ধান্তগুলোকে লাইনচ্যুত করে দেওয়া মানসিক প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ঠিক কী পদক্ষেপ আপনার নেওয়া প্রয়োজন তা আপনি জানতে পারবেন যা কোনো পজিশনে প্রবেশ করার আগে আপনি নিজের জন্য যে প্রাথমিক পরিকল্পনাটি নির্ধারণ করেছিলেন তা থেকে যাতে আপনি বিপথগামী না হন তা নিশ্চিত করবে। 

ক্রিপ্টোতে কি ট্রেডিং সাইকোলজি আলাদা?

ট্রেডিং সাইকোলজি ক্রিপ্টোসহ যেকোনো অ্যাসেট শ্রেণীর জন্যই সত্য। একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত সকল মানুষেরই কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট রয়েছে, বিশেষ করে আর্থিক বিষয়ে। যেমন, অধিকাংশ লোকই অর্থ হারানোকে নয় অর্জনকে উপভোগ করেন। এছাড়াও, হট স্ট্রীকে থাকলে যেকোনো অ্যাসেটের ট্রেডাররাই উত্তেজিত বোধ করেন। 

তবে, কিছু ইউনিক মানসিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেগুলোর মুখোমুখি ক্রিপ্টো ট্রেডারদের হতে হয়।

সপ্তাহান্তে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টক মার্কেটের বিপরীতে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট 24/7 খোলা থাকে। ফলস্বরূপ, ক্রিপ্টো ট্রেডারদের সর্বদা ট্রেডিং টুল, তাদের অ্যাসেট এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটি অর্থাৎ সম্ভাব্য সুযোগগুলোতে অ্যাক্সেস থাকে। আবেগগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় এমন কোনো ট্রেডারের জন্য 24/7 অ্যাক্সেস থাকা সম্ভাব্য লোকসানের কারণ হতে পারে। 

এছাড়াও ক্রিপ্টো মার্কেট অত্যন্ত অস্থির। কয়েনের মূল্য যেখান থেকে শুরু হয়েছিল সেখানে ফিরে যাওয়ার আগে দ্বিগুণ হয়েছিল — এক দিনের মধ্যেই। মূল্যের এই ধরনের প্রচুর পরিবর্তনের জন্য ট্রেডারদেরকে শৃঙ্খলা এবং একইসাথে দৃঢ়তা বজায় রেখে দ্রুত চিন্তা করতে হবে। 

উদাহরণস্বরূপ, সবাই বলাবলি করছে দেখেই পেশাদার ট্রেডাররা দ্রুত মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন কোনো অ্যাসেটের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন না, আবার একদিনের জন্য মার্কেট মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই তাদের সকল পুঁজির ঝুঁকি নেওয়ার সিদ্ধান্তও নেন না।

শেষ কথা

আবেগ হলো ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ের সবচেয়ে প্রচলিত সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। আপনার মানসিকতা এবং সংবেদনশীলতার ট্রিগারগুলো বোঝার মাধ্যমে আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখা একটি অমূল্য দক্ষতা যা আপনাকে বিক্রি করে লাভ নিয়ে ফেলা বা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আপনার স্টক/অ্যাসেট বিক্রি করে নগদ করে ফেলা থেকে রক্ষা করবে। 

অবশেষে, একজন ভালো ট্রেডার হওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে নিয়মিত শিক্ষা এবং অনুশীলনের প্রয়োজন। ট্রেড করে ধনী হওয়ার কোনো শর্টকাট বা লাইফ হ্যাক নেই। এমন কোনো কৌশল অনুসরণ করুন যা আপনার আর্থিক পরিস্থিতির সাথে খাপ খায়, অনুশীলন চালিয়ে যান এবং ভয় বা লোভের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেবেন না যেটি স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আপনার করার কথা নয়। 

আরো পড়ুন

দাবিত্যাগ এবং ঝুঁকি বিষয়ক সতর্কতা: এই লেখাটি আপনার কাছে কোনো ধরনের প্রতিনিধিত্ব বা নিশ্চয়তা ছাড়াই শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য ও শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে "যেমন আছে (as is)" তেমন ভিত্তিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটিকে আর্থিক পরামর্শ হিসেবে অথবা কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা পরিষেবা ক্রয়ের সুপারিশ হিসেবে এটিকে বিবেচনা করা যাবে না। ডিজিটাল অ্যাসেটের মূল্য অস্থিতিশীল হতে পারে। আপনার বিনিয়োগের ভ্যালু হ্রাস হবার পাশাপাশি বাড়তেও পারে এবং আপনি যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছেন তা ফেরত নাও পেতে পারেন। আপনার বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের দায় সম্পূর্ণভাবেই আপনার ও কোনো সম্ভাব্য লোকসানের জন্য Binance দায়ী নয়। এটি কোনো আর্থিক পরামর্শ নয়।