ডাউ তত্ত্ব পরিচিতি
সুচিপত্র
ডাউ তত্ত্ব কী?
ডাউ তত্ত্বের মূল নীতি
শেষ কথা
ডাউ তত্ত্ব পরিচিতি
হোম
নিবন্ধ
ডাউ তত্ত্ব পরিচিতি

ডাউ তত্ত্ব পরিচিতি

প্রকাশিত হয়েছে Jan 15, 2020আপডেট হয়েছে Feb 23, 2023
5m

ডাউ তত্ত্ব কী?

মূলত, ডাউ তত্ত্ব হলো মার্কেট তত্ত্ব সম্পর্কিত চার্লস ডাউ-এর লেখার উপর ভিত্তি করে তৈরি টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস এর একটি ফ্রেমওয়ার্ক। ডাউ ছিলেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক এবং ডাউ জোন্স অ্যান্ড কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা। কোম্পানির অংশ হিসেবে তিনি ডাউ জোন্স ট্রান্সপোর্টেশন ইনডেক্স (DJT) নামে পরিচিত প্রথম স্টক ইনডেক্স এবং তারপরে ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ (DJIA) তৈরি করতে সাহায্য করেন।

ডাউ কখনই তার ধারণাগুলোকে নির্দিষ্ট কোনো তত্ত্ব হিসেবে লেখেননি এবং সেগুলোকে তত্ত্ব হিসেবে উল্লেখও করেননি। তা সত্ত্বেও, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে তাঁর লেখা সম্পাদকীয়গুলোর মাধ্যমে অনেকেই তাঁর কাছ থেকে শিখেছেন। তার মৃত্যুর পর উইলিয়াম হ্যামিল্টনের মতো সম্পাদকরা এই ধারণাগুলোকে পরিমার্জিত করেন এবং তার সম্পাদকীয়গুলোকে একত্রিত করেন যা এখন ডাউ তত্ত্ব নামে পরিচিত।

এই নিবন্ধটি ডাউ তত্ত্বের একটি ভূমিকা যা ডাউ-এর কাজের উপর ভিত্তি করে মার্কেটের প্রবণতার বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে আলোচনা করে। যেকোনো তত্ত্বের মতোই নিম্নলিখিত নীতিগুলোও অখণ্ডনীয় নয় এবং নতুন ব্যাখ্যা হতে পারে।

 

ডাউ তত্ত্বের মূল নীতি

মার্কেটই সবকিছু প্রতিফলিত করে

এই নীতিটি দক্ষ মার্কেট হাইপোথিসিস (EMH) -এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। ডাউ বিশ্বাস করতেন যে মার্কেটই সবকিছুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যার মানে উপলভ্য সকল তথ্যই মূল্যের মধ্যে প্রতিফলিত হয়।

উদাহরণস্বরূপ, কোনো কোম্পানি ব্যাপকভাবে ইতিবাচক বর্ধিত উপার্জনের করবে বলে যদি প্রত্যাশা করা হয় তাহলে তা হওয়ার আগে মার্কেটে এটির প্রতিফলন হবে। প্রতিবেদন প্রকাশের আগে তাদের শেয়ারের চাহিদা বাড়বে এবং শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত ইতিবাচক প্রতিবেদন আসার পরে মূল্য ততটা পরিবর্তন নাও হতে পারে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাউ দেখেছেন যে কোনো কোনো কোম্পানির স্টকের মূল্য ভালো খবরের পরেও কমতে পারে কারণ এটি প্রত্যাশিত মাত্রার ভালো ছিল না।

এই নীতিটি এখনও অনেক ট্রেডার এবং বিনিয়োগকারীরা সত্য বলে বিশ্বাস করেন, বিশেষ করে যারা টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের ব্যাপক ব্যবহার করে। তবে, ফান্ডামেন্টাল অ্যানালাইসিস যারা পছন্দ করেন তারা একমত নন এবং বিশ্বাস করেন যে মার্কেট মূল্য কোনো স্টকের অন্তর্নিহিত মূল্যকে প্রতিফলিত করে না।

 

মার্কেট প্রবণতা

কেউ কেউ বলেন যে ডাউ এর কাজই মার্কেটের প্রবণতার ধারণার জন্ম দিয়েছে যা এখন আর্থিক বিশ্বের একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। ডাউ তত্ত্ব বলে যে মার্কেটের তিনটি প্রধান প্রবণতা রয়েছে:

  • প্রাইমারি ট্রেন্ড – এটি মাস থেকে বহু বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়, এটিই মার্কেটের প্রধান কার্যকলাপ।

  • সেকেন্ডারি ট্রেন্ড – এটি কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

  • টার্শিয়ারি ট্রেন্ড – এক সপ্তাহের কম বা অনধিক দশ দিনের মধ্যে শেষ হওয়ার প্রবণতা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলো দিনে শুধুমাত্র কয়েক ঘন্টা বা একদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

ভিন্ন ভিন্ন এসব প্রবণতা পরীক্ষা করার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা সুযোগ খুঁজে বের করতে পারেন। মূলত প্রাইমারি ট্রেন্ড বিবেচ্য হলেও মাধ্যমিক ও টার্শিয়ারি ট্রেন্ডগুলো প্রাইমারি ট্রেন্ডের বিপরীত হলে অনুকূল সুযোগ ঘটতে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সির ইতিবাচক প্রাইমারি ট্রেন্ড আছে, কিন্তু এটি ঋণাত্মক সেকেন্ডারি প্রবণতা দেখাচ্ছে, তাহলে এটি তুলনামূলকভাবে কমে কেনার সুযোগ থাকতে পারে এবং এর মূল্য বেড়ে গেলে বিক্রির চেষ্টা করা যায়।

সমস্যা হল আপনি কোন ধরণের প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করছেন তা শনাক্ত করা এবং সেখানেই গভীর টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস প্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। বর্তমানে বিনিয়োগকারী এবং ট্রেডাররা কোন ধরনের প্রবণতা দেখছেন তা বুঝতে সাহায্য করার জন্য বিস্তৃত বিশ্লেষণমূলক সরঞ্জাম ব্যবহার করেন।

 

প্রাইমারি ট্রেন্ডের তিনটি পর্যায়

ডাউ দেখিয়েছেন যে দীর্ঘমেয়াদী প্রাইমারি ট্রেন্ডের তিনটি পর্যায়আছে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ঊর্ধ্বমুখী বাজারের পর্যায়গুলো হবে:

  • সঞ্চয় – পূর্ববর্তী নিম্নমুখী বাজারেরপরে অ্যাসেটের মূল্যায়ন তখনও কম কারণ মার্কেটের মনোভাব প্রধানত নেতিবাচক। স্মার্ট ব্যবসায়ী ও মার্কেট নির্মাতারা এই সময়ের মধ্যে মূল্য বৃদ্ধির আগে জমা করতে শুরু করে।

  • জনসাধারণের অংশগ্রহণ – বৃহত্তর মার্কেট এখন সেই সুযোগ উপলব্ধি করে যা স্মার্ট ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে জনসাধারণ ক্রমশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই পর্যায়ে, মূল্য দ্রুত বাড়তে থাকে।

  • অতিরিক্ত এবং বিতরণ – তৃতীয় পর্যায়ে, সাধারণ জনগণ স্পেকুলেট করতে থাকে, তবে প্রবণতাটি শেষের কাছাকাছি চলে আসে। মার্কেট নির্মাতারা তাদের হোল্ডিং বিতরণ করতে শুরু করে অর্থাৎ অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের কাছে বিক্রি করে যারা এখনও বুঝতে পারেনি যে প্রবণতাটি বিপরীত দিকে যাচ্ছে।

কোনো নিম্নমুখী বাজারে পর্যায়গুলো মূলত বিপরীত হবে। যারা লক্ষণগুলো চিনতে পারে প্রবণতাটি তাদের থেকে বিতরণের মাধ্যমে শুরু হবে এবং এরপরে জনগণ অংশগ্রহণ করবে। তৃতীয় পর্যায়ে জনসাধারণের হতাশা অব্যাহত থাকলেও আসন্ন পরিবর্তন দেখতে পাওয়া বিনিয়োগকারীরা আবার জমা করতে শুরু করবে। 

নীতিটি সত্যই হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই তবে হাজার হাজার ট্রেডার এবং বিনিয়োগকারী পদক্ষেপ নেওয়ার আগে এই পর্যায়গুলো বিবেচনা করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ওয়াইকঅফ পদ্ধতিটিও সঞ্চয় ও বিতরণের ধারণার উপর নির্ভর করে, যা মার্কেট চক্রের (এক পর্যায় থেকে অন্য ধাপে যাওয়া) কিছুটা অনুরূপ ধারণা বর্ণনা করে।

 

ক্রস-ইনডেক্স কোরিলেশন

ডাউ বিশ্বাস করত যে কোনো মার্কেট ইনডেক্সে দেখা প্রাইমারি ট্রেন্ড অন্য মার্কেট ইনডেক্সে দেখা প্রবণতা দ্বারা নিশ্চিত হতে হবে। সেই সময়ে এটি প্রধানত ডাউ জোন্স ট্রান্সপোর্টেশন ইনডেক্স এবং ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল গড়ের সাথে সম্পর্কিত ছিল।

তখন, পরিবহন মার্কেট (প্রধানত রেলপথ) শিল্প কার্যকলাপের সাথে ব্যাপকভাবে যুক্ত ছিল। এটি যুক্তিযুক্ত: আরো পণ্য উত্পাদন করার জন্য, প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ করার জন্য প্রথমে রেলের কার্যক্রম বৃদ্ধির প্রয়োজন ছিল। 

সে কারণে উৎপাদন শিল্প এবং পরিবহন মার্কেটের মধ্যে একটি স্পষ্ট সম্পর্ক ছিল। একটি সুস্থ থাকলে অন্যটিও ভালো থাকবে। তবে, ক্রস-ইনডেক্স কোরিলেশনের নীতিটি আজকের দিনে খুব একটা কার্যকর নয় কারণ অনেক পণ্যই এখন ডিজিটাল ও এগুলোর জন্য ফিজিকাল বিতরণের প্রয়োজন হয় না।

 

পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ

ডাউ পরিমাণকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেকেন্ডারি ইন্ডিকেটর মনে করতেন যেটি অনেক বিনিয়োগকারীই এখন মনে করে থাকে। এই ইন্ডিকেটরের অর্থ হলো শক্তিশালী কোনো প্রবণতার সাথে উচ্চ ট্রেডিংয়ের পরিমাণ থাকতে হবে। পরিমাণ যত বেশি হবে মার্কেটের প্রকৃত প্রবণতা প্রতিফলিত হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি হবে। ট্রেডিংয়ের পরিমাণ কম হলে প্রাইস অ্যাকশন মার্কেটের প্রকৃত প্রবণতা উপস্থাপন নাও করতে পারে।

 

রিভার্সাল নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো প্রবণতাই কার্যকর

ডাউ বিশ্বাস করতেন যে মার্কেট যদি ট্রেন্ডিং থাকে তাহলে প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। সুতরাং, উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যবসার স্টক যদি ইতিবাচক সংবাদের পরে উপরের দিকে ট্রেডিং হওয়া শুরু করে তাহলে কোনো সুনির্দিষ্ট রিভার্সাল দেখানো না পর্যন্ত এটি চলতে থাকবে।

এই কারণে, ডাউ বিশ্বাস করতেন যে নতুন প্রাইমারি প্রবণতা হিসেবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রিভার্সালকে সতর্কতার সাথে বিবেচনা করতে হবে। অবশ্যই, সেকেন্ডারি প্রবণতা এবং নতুন প্রাইমারি ট্রেন্ডের সূচনার মধ্যে পার্থক্য করা সহজ নয়, এবং প্রায়শই ট্রেডাররা বিভ্রান্তিকর রিভার্সালের সম্মুখীন হন যেগুলো পরবর্তীতে কেবল সেকেন্ডারি প্রবণতায় পরিণত হয়।

 

শেষ কথা

কিছু কিছু সমালোচক যুক্তি দেন যে ডাউ তত্ত্বটি পুরানো, বিশেষ করে ক্রস-ইনডেক্স কোরিলেশনের ক্ষেত্রে (যা বলে যে একটি ইনডেক্স বা গড় অন্যটিকে সমর্থন করতে হবে)। তবুও, অধিকাংশ বিনিয়োগকারী ডাউ তত্ত্বকে আজকের দিনে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন। শুধুমাত্র এই কারণে নয় যে এটি আর্থিক সুযোগগুলো চিহ্নিত করে বরং তত্ত্ব-এর কাজ থেকে তৈরি হওয়া মার্কেট প্রবণতার ধারণার কারণেও।