TL;DR
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা দায়িত্বশীল বিনিয়োগ ও ট্রেডিংয়ের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি বিভিন্ন উপায়ে আপনার পোর্টফোলিওর সামগ্রিক ঝুঁকি কমাতে পারে — উদাহরণস্বরূপ, আপনি আপনার বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনতে পারেন, ফাইনান্সিয়াল ইভেন্টের উপরে হেজ করতে পারেন বা সাধারণ স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট অর্ডারগুলো বাস্তবায়ন করতে পারেন।
ভূমিকা
ঝুঁকি কমানো অনেক বিনিয়োগকারী ও ট্রেডারদের জন্য একটি অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ। এমনকি যদি আপনার ঝুঁকি সহনশীলতা বেশি হয়, তবুও আপনি, কোনো না কোনোভাবে, আপনার বিনিয়োগের ঝুঁকির বিপরীতে লাভের হিসাব তুলনা করবেন। তবে, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মধ্যে কম ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেড বা বিনিয়োগ বেছে নেওয়াই নয়, এর বাইরে আরো অনেক কিছু রয়েছে। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশলের একটি সামগ্রিক টুলসেট উপলভ্য রয়েছে যার মধ্যে অনেকগুলো নতুনদের জন্যও উপযুক্ত।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কী?
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় আপনার বিনিয়োগের সাথে জড়িত আর্থিক ঝুঁকিগুলোকে কমিয়ে আনার জন্য পূর্বাভাস দেওয়া এবং চিহ্নিত করা অন্তর্ভুক্ত। বিনিয়োগকারীরা তখন তাদের পোর্টফোলিওর ঝুঁকির সম্ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করার জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল নিযুক্ত করে। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হলো আপনার বর্তমান ঝুঁকির সম্ভাবনা মূল্যায়ন করা এবং তারপরে আপনার কৌশল ও সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করা।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলো হলো পরিকল্পনা ও কৌশলগত পদক্ষেপ যা ট্রেডার ও বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের ঝুঁকি চিহ্নিত করার পরে বাস্তবায়ন করে। এই কৌশলগুলো ঝুঁকি কমায় এবং আর্থিক ক্রিয়াকলাপগুলোর একটি বিস্তৃত পরিসরকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, যেমন লোকসানের বিমা নেওয়া এবং অ্যাসেট শ্রেণী জুড়ে আপনার পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যময় করা।
সক্রিয় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অনুশীলনের পাশাপাশি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে পদ্ধতি বাছাই করবেন তা আপনার পছন্দের কৌশলটিকে সূচিত করবে বিধায় কোনো নির্দিষ্ট ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল শুরু করার আগে চারটি মূল পরিকল্পনা পদ্ধতি বিবেচনা করতে হবে।
চারটি মূল ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা পদ্ধতি
গ্রহণযোগ্যতা: কোনো অ্যাসেটে বিনিয়োগের করার ঝুঁকি নেওয়া কিন্তু সম্ভাব্য ক্ষতি খুব বড় না হওয়ায় সেই ঝুঁকি এড়াতে অর্থ ব্যয় না করা।
স্থানান্তর: অর্থ খরচ করে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিনিয়োগের ঝুঁকি ট্রান্সফার করা।
পরিহার: সম্ভাব্য ঝুঁকি থাকা কোনো অ্যাসেটে বিনিয়োগ না করা।
হ্রাস: আপনার পোর্টফোলিও জুড়ে বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের আর্থিক পরিণতি হ্রাস করা। এটি একই অ্যাসেট শ্রেণীর মধ্যে বা এমনকি শিল্প ও অ্যাসেট জুড়ে হতে পারে।
ক্রিপ্টোতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল গুরুত্বপূর্ণ কেন?
এটি সাধারণ জ্ঞানের ব্যাপার যে, একটি অ্যাসেট শ্রেণী হিসেবে ক্রিপ্টো গড় বিনিয়োগকারীদের কাছে থাকা উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগগুলোর মধ্যে একটি। মূল্য অস্থির বলে প্রমাণিত হয়েছে, প্রজেক্টগুলো রাতারাতি ক্র্যাশ করতে পারে, এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তিটি নতুনদের বোঝার জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
ক্রিপ্টো দ্রুত অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে সম্ভাব্য ঝুঁকিতে আপনার এক্সপোজার কমাতে সঠিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা চর্চা ও কৌশল নিযুক্ত করা অপরিহার্য। এটি একজন সফল ও দায়িত্বশীল ট্রেডার হওয়ার জন্য একটি অপরিহার্য পদক্ষেপও।
আপনার ক্রিপ্টো পোর্টফোলিওকে উপকৃত করতে পারে এমন পাঁচটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল সম্পর্কে জানতে পড়তে থাকুন।
কৌশল #1: 1% নিয়ম বিবেচনা করুন
1% নিয়ম হলো একটি সহজ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল যেখানে কোনো বিনিয়োগ বা ট্রেডে আপনার মোট মূলধনের 1%-এর বেশি ঝুঁকিপূর্ণ থাকতে দেয় না। বিনিয়োগের জন্য আপনার যদি $10,000 থাকে এবং আপনি 1% নিয়ম মেনে চলতে চান, তাহলে কয়েকটি উপায় রয়েছে।
একটি হলো $1,000 মূল্যের বিটকয়েন (BTC) ক্রয় করা এবং $9,900-এ বিক্রয় করার জন্য একটি স্টপ-লস বা স্টপ-লিমিট অর্ডার সেট করা। এখানে, আপনি আপনার মোট বিনিয়োগ মূলধনের ($100) 1% হারে আপনার ক্ষতি কমিয়ে আনবেন।
আপনি স্টপ-লস অর্ডার সেট না করেও $100 ইথার (ETH) ক্রয় করতে পারেন, কারণ ETH-এর মূল্য 0-তে নেমে গেলে আপনি আপনার মোট মূলধনের সর্বাধিক 1% হারাবেন। 1% নিয়ম আপনার বিনিয়োগের আকারকে নয়, প্রভাবিত করে আপনি যে পরিমাণ বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক সেটিকে।
মার্কেটের অস্থিরতার কারণে ক্রিপ্টো ব্যবহারকারীদের জন্য 1% নিয়মটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। লোভী হওয়া সহজ এবং কিছু বিনিয়োগকারী একটি বিনিয়োগে খুব বেশি পরিমাণ নিয়োগ করে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বিপুল লোকসানের সম্মুখীন হতে পারে।
কৌশল #2: স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট পয়েন্ট সেট করা
কোনো স্টপ-লস অর্ডার কোনো অ্যাসেটের একটি পূর্বনির্ধারিত মূল্য সেট করে যে মূল্যে পজিশনটি ক্লোজ হবে। স্টপ মূল্য বর্তমান মূল্যের নিচে সেট করা হয় এবং ট্রিগার হলে আরো বেশি লোকসানের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত করতে সাহায্য করে। টেক-প্রফিট অর্ডার বিপরীতভাবে কাজ করে। আপনি যে মূল্যে পজিশন ক্লোজ করতে চান এবং একটি নির্দিষ্ট লাভে লক করতে চান সেই মূল্য নির্ধারণ করে।
স্টপ-লস এবং টেক-প্রফিট অর্ডার আপনাকে আপনার ঝুঁকিকে দুটি পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। প্রথমত, এগুলোকে আগে থেকে সেট আপ করা যায় এবং এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে। 24/7 উপলভ্য থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। মূল্য বিশেষভাবে অস্থির হলে আপনার পূর্বনির্ধারিত অর্ডারগুলো ট্রিগার করা হবে। এটি আপনাকে আপনার জন্য গ্রহণযোগ্য লোকসান ও লাভের বাস্তবসম্মত সীমা নির্ধারণ করার সুযোগ প্রদান করে।
তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তের চেয়ে এই সীমাগুলো আগেই সেট করা ভালো। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে টেক-প্রফিট অর্ডারের কথা ভাবা অদ্ভুত মনে হলেও আপনার ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে আপনি যত বেশি টেক প্রফিটের জন্য অপেক্ষা করবেন, অতিরিক্ত উত্থানের অপেক্ষায় মার্কেটের ঝুঁকি তত বেশি হবে।
কৌশল #3: বৈচিত্র্য এবং হেজ
আপনার পোর্টফোলিওর বৈচিত্র্যকরণ হল আপনার বিনিয়োগের সামগ্রিক ঝুঁকি কমানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও মৌলিক হাতিয়ারগুলোর মধ্যে একটি। একটি বৈচিত্র্যপূর্ণ পোর্টফোলিওতে কোনো অ্যাসেট বা অ্যাসেট শ্রেণীতে খুব বেশি বিনিয়োগ থাকবে না যা কোনো নির্দিষ্ট অ্যাসেট বা অ্যাসেট শ্রেণী থেকে বড়সড় লোকসানের ঝুঁকি কমায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি বিভিন্ন ধরনের কয়েন ও টোকেন হোল্ড করতে পারেন, সেইসাথে তারল্য ও ঋণ প্রদান করতে পারেন।
হেজিং হলো লাভ সুরক্ষিত করার বা অন্য অ্যাসেট ক্রয় করে লোকসান কমানোর অ্যাডভান্সড কৌশল। সাধারণত এই অ্যাসেটগুলো ব্যস্তানুপাতে সম্পর্কযুক্ত। বৈচিত্র্যকরণ এক ধরনের হেজ হতে পারে, তবে সম্ভবত সবচেয়ে সুপরিচিত উদাহরণ হলো ফিউচার।
একটি ফিউচার কন্ট্রাক্ট আপনাকে ভবিষ্যতের কোনো তারিখে একটি অ্যাসেটের মূল্য লক করার সুযোগ দেয়। যেমন কল্পনা করুন যে আপনি মনে করছেন বিটকয়েনের মূল্য কমে যাবে। তাই আপনি এই ঝুঁকির বিরুদ্ধে হেজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং তিন মাসে $20,000-এ BTC বিক্রয় করার জন্য একটি ফিউচার কন্ট্রাক্ট খুললেন। যদি তিন মাস পরে বিটকয়েনের মূল্য সত্যিই $15,000-এ নেমে আসে, তাহলে আপনি আপনার ফিউচার পজিশন থেকে লাভবান হবেন।
এটি মনে রাখা মূল্যবান যে ফিউচার কন্ট্রাক্টগুলো আর্থিকভাবে নিষ্পত্তি করা হয় এবং আপনাকে কয়েনগুলো সরাসরি সরবরাহ করতে হবে না। এই ক্ষেত্রে, আপনার কন্ট্রাক্টের অন্য দিকের ব্যক্তি আপনাকে $5,000 প্রদান করবে (স্পটের মূল্য এবং ফিউচার মূল্যের পার্থক্য), এবং আপনি বিটকয়েনের মূল্য হ্রাসের ঝুঁকির বিরুদ্ধে হেজ করবেন।
যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে, ক্রিপ্টো বিশ্ব অস্থির। তবে, এখনও এই অ্যাসেট শ্রেণীর মধ্যে বৈচিত্র্য আনার এবং হেজিংয়ের সুযোগগুলো ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। কম অস্থিরতা থাকা অধিক ঐতিহ্যবাহী আর্থিক মার্কেটের তুলনায় ক্রিপ্টোতে বৈচিত্র্যকরণ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কৌশল #4: একটি এক্সিট কৌশল প্রস্তুত রাখুন
এক্সিট কৌশল থাকা বড় লোকসানের ঝুঁকি কমানোর একটি সহজ কিন্তু কার্যকর পদ্ধতি। পরিকল্পনায় লেগে থাকার মাধ্যমে আপনি কোনো পূর্বনির্ধারিত বিন্দুতে লাভ বা ক্ষতি কমাতে পারেন।
প্রায়শই, লাভ করার সময় ট্রেড অব্যাহত রাখতে চাওয়া বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অত্যধিক বিশ্বাস রাখা সহজ হয়ে যায়, এমনকি যখন মূল্য কমে তখনও। হাইপ, ম্যাক্সিমালিজম, বা ট্রেডিং কমিউনিটির মধ্যে আটকা পড়া আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণকেও ঘোলা করে দিতে পারে।
একটি এক্সিট কৌশল সফলভাবে বাস্তবায়নের একটি পদ্ধতি হলো লিমিট অর্ডার ব্যবহার করা। আপনি টেক প্রফিট করতে বা সর্বোচ্চ লোকসান নির্ধারণ যাই করতে চান না কেন, আপনি সেগুলোকে আপনার লিমিট প্রাইসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রিগার করতে সেট করতে পারেন।
কৌশল #5: আপনার নিজের গবেষণা করুন (DYOR)
DYOR যেকোনো বিনিয়োগকারীর জন্য ঝুঁকি-হ্রাসের একটি অবিচ্ছেদ্য কৌশল। ইন্টারনেট যুগে আপনার নিজের গবেষণা পরিচালনা করা আগের চেয়ে সহজ। কোনো টোকেন, কয়েন, প্রজেক্ট, বা অন্য অ্যাসেটে বিনিয়োগ করার আগে আপনাকে অবশ্যই যথাযথ গবেষণা করতে হবে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি হোয়াইটপেপার, টোকেনমিক্স, অংশীদারিত্ব, রোডম্যাপ, কমিউনিটি এবং অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলোর মত কোনো প্রজেক্টের প্রয়োজনীয় তথ্য পরীক্ষা করবেন।
তবে, ভুল তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এবং যেকেউ তাদের মতামত বা অনলাইনে প্রকৃত তথ্য হিসেবে জমা দিতে পারে। গবেষণা পরিচালনা করার সময়, আপনি আপনার তথ্য কোথায় পাচ্ছেন এবং এটি যে প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করা হয়েছে তা বিবেচনা করুন। শিলিং একটি প্রচলিত বিষয়ক এবং প্রজেক্ট বা বিনিয়োগকারীরা মিথ্যা, পক্ষপাতদুষ্ট বা প্রচারনামূলক খবর ছড়িয়ে দিতে পারে এমনভাবে যেন এটি অকৃত্তিম ও বাস্তব।
শেষ কথা
ব্যাখ্যা করা এই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার পাঁচটি কৌশলের মাধ্যমে আপনার পোর্টফোলিওর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করার জন্য আপনার কাছে একটি কার্যকর ট্যুল কিট থাকবে। এমনকি অধিকাংশ এলাকাকে কভার করে এমন সহজ কোনো পদ্ধতির ব্যবহার আপনাকে আরো দায়িত্বশীলভাবে বিনিয়োগ করতে সাহায্য করবে। স্কেলের অন্য প্রান্তে, আরো উন্নত, গভীর কৌশলের মাধ্যমে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা তৈরি করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিষয়টির আরো গভীরে যেতে, নিম্নলিখিত নিবন্ধগুলো পড়ুন: