মুদ্রাস্ফীতি কী?
সুচিপত্র
ভূমিকা
মুদ্রাস্ফীতির কারণ
মুদ্রাস্ফীতির প্রতিকার
মূল্য সূচক দিয়ে মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ করা
মুদ্রাস্ফীতির সুবিধা-অসুবিধা
শেষ কথা
হোম
নিবন্ধ
মুদ্রাস্ফীতি কী?

মুদ্রাস্ফীতি কী?

প্রকাশিত হয়েছে Nov 28, 2018আপডেট হয়েছে Jan 31, 2023
10m

ভূমিকা

কখনও কি আপনার দাদির কাছে শুনেছেন যে, তিনি যখন ছোট ছিলেন তখন সবকিছু কেমন সস্তা ছিল? মুদ্রাস্ফীতির কারণেই এটি ঘটে। এটি পণ্য এবং পরিষেবার সরবরাহ ও চাহিদার গরমিলের কারণে ঘটে, যার ফলে দাম বেড়ে যায়।

এর সুবিধা আছে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে, অত্যধিক মুদ্রাস্ফীতি খারাপ জিনিস: আপনার টাকার মূল্য যদি আগামীকাল কমে যায় তাহলে আপনি আপনার অর্থ সংরক্ষণ করতে চাইবেন কেন? মুদ্রাস্ফীতি যখন খুব বেশি হয় তখন তা নিয়ন্ত্রণ করতে, সরকারগুলো এমন নীতিমালা প্রয়োগ করে যার লক্ষ্য থাকে ব্যয় হ্রাস করা।


বিষয়বস্তু


ভূমিকা

মুদ্রাস্ফীতিকে একটি নির্দিষ্ট মুদ্রার ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। এটি অর্থনীতিতে পণ্য ও পরিষেবার মূল্যের স্থায়ী বৃদ্ধি।

যদিও "আপেক্ষিক-মূল্য পরিবর্তন" বলতে যেখানে সাধারণত মাত্র একটি বা দুটি পণ্যের দাম বৃদ্ধিকে বোঝায়, সেখানে মুদ্রাস্ফীতি বলতে অর্থনীতিতে প্রায় সকল জিনিসপত্রের খরচ বৃদ্ধিকে বোঝায়। এছাড়াও, মুদ্রাস্ফীতি একটি দীর্ঘমেয়াদী ঘটনা – মূল্য বৃদ্ধি স্থায়ী হয়ে যায় এবং এটি শুধুই কোনো বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়।

বেশিরভাগ দেশ মুদ্রাস্ফীতির হারের বার্ষিক পরিমাপ করে থাকে। সাধারণভাবে, আপনি মুদ্রাস্ফীতিকে শতাংশের পরিবর্তন হিসেবে প্রকাশ করতে দেখবেন: পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এর বৃদ্ধি বা হ্রাস।

এই নিবন্ধে, আমরা মুদ্রাস্ফীতির বিভিন্ন কারণ, এটি পরিমাপ করার উপায় এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব (ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয়ই) নিয়ে আলোচনা করব।


মুদ্রাস্ফীতির কারণ

সহজভাবে বুঝতে, আমরা মুদ্রাস্ফীতির দুটি সাধারণ কারণ বর্ণনা করতে পারি। প্রথমত, মুদ্রার প্রচলনে প্রকৃত মুদ্রার পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি (সরবরাহ)। উদাহরণস্বরূপ, যখন ইউরোপীয় বিজেতারা 15 শতকে পশ্চিম গোলার্ধ জয় করেছিল, তখন ইউরোপে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বুলিয়নের ছড়াছড়ি হয়েছিল এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণ ঘটিয়েছিল (সরবরাহ ছিল খুবই বেশি)।

দ্বিতীয়ত, উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন নির্দিষ্ট পণ্যের সরবরাহে ঘাটতির কারণে মুদ্রাস্ফীতি ঘটতে পারে। এটি তখন সেই পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে উল্লম্ফন ঘটাতে পারে, যা অর্থনীতির বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর ফলে প্রায় সমস্ত পণ্য ও পরিষেবা জুড়ে সাধারণভাবে মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে পারে।

কিন্তু যদি আমরা আরো খতিয়ে দেখি, তাহলে আমরা এমন বিভিন্ন ধরনের ঘটনা বর্ণনা করতে পারি যা মুদ্রাস্ফীতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এখানে, আমরা ডিমান্ড-পুল ইনফ্লেশন, কস্ট-পুশ ইনফ্লেশন এবং বিল্ট-ইন ইনফ্লেশন এর মধ্যে পার্থক্য জানার চেষ্টা করব। অন্যান্য আরো বৈচিত্র থাকলেও, অর্থনীতিবিদ রবার্ট জে. গর্ডন-এর প্রস্তাবিত "ত্রিভুজ মডেল" এর মধ্যে এইগুলোই প্রধান।


ডিমান্ড-পুল ইনফ্লেশন

ডিমান্ড-পুল ইনফ্লেশন হলো সবচেয়ে সাধারণ ধরনের মুদ্রাস্ফীতি, যা ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ঘটে। এই উদাহরণে, চাহিদা পণ্য ও পরিষেবার সরবরাহকে ছাড়িয়ে যায় – এই ঘটনাটি দাম বৃদ্ধির কারণ হয়।

এটি বোঝানোর জন্য, আসুন একটা মার্কেটপ্লেসের কথা বিবেচনা করা যাক যেখানে একজন রুটিওয়ালা তার পণ্য বিক্রি করে। সে প্রতি সপ্তাহে প্রায় 1,000টি রুটি তৈরি করতে পারে। এটি বেশ ভালোভাবে চলতে থাকে, কারণ সে প্রতি সপ্তাহে মোটামুটি সেই পরিমাণ পণ্যই বিক্রি করে থাকে।

কিন্তু এই অবস্থায় ধরুন, রুটির চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেল। সম্ভবত অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে, আর সে কারণে ভোক্তারা আরো বেশি খরচ করতে পারছে। ফলস্বরূপ, আমরা সম্ভবত রুটিওয়ালার রুটির দাম বাড়তে দেখব।

কেন? আচ্ছা, আমাদের রুটিওয়ালা যখন 1,000টি রুটি তৈরি করে তখন সে তার পূর্ণ সক্ষমতায় কাজ করে। তার কর্মচারি অথবা তার ওভেনের সংখ্যা উভয়ে মিলে বাস্তবিক পক্ষে সেই পরিমাণের বেশি উৎপাদন করতে পারে না। সে আরো ওভেন তৈরি করতে পারে এবং আরো কর্মচারি নিয়োগ দিতে পারে, তবে সেটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

ততক্ষণে, অনেক গ্রাহক অপেক্ষায় থাকবে এবং পর্যাপ্ত রুটি থাকবে না। কিছু গ্রাহক রুটির জন্য উচ্চ মূল্য দিতে ইচ্ছুক হবে, তাই স্বাভাবিকভাবেই রুটিওয়ালা সেই অনুযায়ী রুটির দাম বাড়িয়ে দেবে।

এখন কল্পনা করুন যে, উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থায় রুটির বর্ধিত চাহিদা ছাড়াও দুধ, তেল এবং অন্যান্য অনেক পণ্যের উচ্চ চাহিদা তৈরি হবে। ডিমান্ড-পুল ইনফ্লেশনের সংজ্ঞাটি ঠিক এরকম। লোকেরা এমনভাবে আরো বেশি করে পণ্য কিনছে যেখানে চাহিদা সরবরাহের চেয়ে বেশি হয়ে যাচ্ছে – যার ফলে দাম বাড়ছে।


কস্ট-পুশ ইনফ্লেশন

কস্ট-পুশ ইনফ্লেশন ঘটে যখন কাঁচামাল বা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির ফলে দামের মাত্রা বেড়ে যায়। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, ভোক্তাকে সেই খরচগুলোর দিকে "ঠেলে" দেওয়া হয়।

চলুন আগের উদাহরণের রুটিওয়ালার দিকে আবার নজর দেওয়া যাক। সে তার নতুন চুলা তৈরি করে নিল এবং সপ্তাহে 4,000টি রুটি তৈরির জন্য অতিরিক্ত কর্মচারি নিয়োগ করল। তাৎক্ষণিকভাবে, সরবরাহের কারণে চাহিদা পূরণ হয়ে যায় এবং সবাই খুশি থাকে।

একদিন, রুটিওয়ালা একটি দুর্ভাগ্যজনক খবর পায়। এই মৌসুমে গমের ফলন খুবই খারাপ হয়েছে, যার অর্থ এই অঞ্চলের সমস্ত বেকারিতে পাঠানোর জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। রুটি তৈরির প্রয়োজনীয় গমের জন্য রুটিওয়ালাকে আরো বেশি খরচ করতে হবে। এই অতিরিক্ত খরচের কারণে, ভোক্তাদের চাহিদা না বাড়লেও তাকে বাড়তি দাম চার্জ করতে হবে।

আরেকটি সম্ভাবনা হলো, সরকার ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে দিল। এতে রুটিওয়ালার উৎপাদন খরচ বেড়ে গেল, তাই, তাকে আবারও প্রক্রিয়াজাত রুটির দাম বাড়াতে হবে।

বৃহত্তর পরিসরে, কস্ট-পুশ ইনফ্লেশন প্রায়ই সম্পদের ঘাটতি (যেমন গম বা তেল), পণ্যের উপর সরকারি কর আরোপ, বা বিনিময় হার হ্রাসের (যার ফলে আমদানি খরচ বেড়ে যায়) কারণে ঘটে।


বিল্ট-ইন ইনফ্লেশন

বিল্ট-ইন ইনফ্লেশন (বা হ্যাংওভার ইনফ্লেশন) হলো এক ধরনের মুদ্রাস্ফীতি যা অতীতের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ থেকে উদ্ভূত হয়। ফলস্বরূপ, পূর্ববর্তী দুই ধরনের মুদ্রাস্ফীতি অনেকদিন ধরে চলতে থাকলে এটির উদ্ভব হতে পারে। বিল্ট-ইন ইনফ্লেশনের বিষয়টি মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা এবং মূল্য-মজুরির চক্রের ধারণার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। 

প্রথমটিতে এই ধারণা দেওয়া হয় যে – মুদ্রাস্ফীতির সময়কালের পরে – ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে মুদ্রাস্ফীতি অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করে। যদি পূর্ববর্তী বছরগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি বহাল থেকে থাকে, তাহলে কর্মচারিদের পক্ষে বেতন বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করার সম্ভাবনা বেশি থাকে, যার ফলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য ও পরিষেবার জন্য আরো বেশি চার্জ করতে পারে।

মূল্য-মজুরির চক্র এমন একটি ধারণা যেখানে বিল্ট-ইন ইনফ্লেশনকে অধিকতর মুদ্রাস্ফীতি ঘটানোর প্রবণতা হিসেবে তুলে ধরা হয়। নিয়োগদাতা এবং শ্রমিকরা যখন তাদের মজুরির মূল্যের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে না তখন এটি ঘটতে পারে। শ্রমিকরা তাদের সম্পদকে প্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতি থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চ মজুরি দাবি করলেও, অন্যদিকে নিয়োগদাতারা তাদের পণ্যের খরচ বাড়াতে বাধ্য হন। এটি একটি স্বয়ংস্ফীত চক্রের দিকে পরিচালিত করতে পারে, যেখানে পণ্য ও পরিষেবার বর্ধিত খরচের প্রতিক্রিয়া হিসেবে শ্রমিকরা আরো বেশি বেতনের দাবি করে – এবং চক্রটি চলতেই থাকে।


মুদ্রাস্ফীতির প্রতিকার

বিটকয়েন কি মুদ্রাস্ফীতির সমাধান হতে পারে


অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে, তাই এর প্রভাব সীমিত করার জন্য সরকারগুলোকে সক্রিয় অবস্থান গ্রহণ করতে হয়। অর্থ সরবরাহ পরিবর্তন করে এবং আর্থিকরাজস্ব নীতিতে পরিবর্তন এনে তারা এটি করতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো (যেমন ইউনাইটেড স্টেটস ফেডারেল রিজার্ভ) মুদ্রা প্রচলনের পরিমাণ বাড়িয়ে বা কমিয়ে ফিয়াট মানির সরবরাহে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। এর একটি সাধারণ উদাহরণ হলো কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং (QE), যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অর্থনীতিতে নতুনভাবে ছাপানো টাকা সংযোজন করার জন্য ব্যাংক সম্পদ ক্রয় করে। এই পদক্ষেপটি বরং মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, তাই যখন মুদ্রাস্ফীতি সমস্যা হয় তখন এটি ব্যবহার করা হয় না।

QE-এর বিপরীত হলো কোয়ান্টিটেটিভ টাইটেনিং (QT), যা এমন একটি আর্থিক নীতি যেখানে অর্থ সরবরাহ কমিয়ে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করা হয়। তবে, QT মুদ্রাস্ফীতির ভালো প্রতিকার হতে পারে কিনা সে বিষয়ে সাপোর্ট করার মতো তেমন কোনো প্রমাণ নেই। বাস্তবে, বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।


উচ্চ হারের সুদ

উচ্চ হারের সুদ বরং টাকা ধার করাকে আরো বেশি ব্যয়বহুল করে তোলে। ফলস্বরূপ, ঋণের বিষয়টি ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছে কম আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বর্ধিত সুদের হার ভোক্তা পর্যায়ে ব্যয়কে নিরুৎসাহিত করবে, যার ফলে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা কমে যাবে।

এই সময়কালে লোকেরা সঞ্চয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং যারা সুদ উপার্জনের জন্য অর্থ ধার দেয় তাদের জন্য সেটি বেশি ভালো। তবে, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সীমিত হতে পারে, কারণ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিরা বিনিয়োগ বা ব্যয় করার জন্য ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকে।


রাজস্ব নীতির পরিবর্তন

যেখানে বেশিরভাগ দেশ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজস্ব নীতি ব্যবহার করে থাকে, সেখানে রাজস্ব নীতি পরিবর্তন করাও একটি অপশন। রাজস্ব নীতি বলতে অর্থনীতিতে প্রভাব রাখার জন্য সরকারের ব্যয় এবং করের সমন্বয়কে বোঝায়। 

উদাহরণস্বরূপ, যদি সরকারগুলো তাদের সংগ্রহযোগ্য আয়কর বাড়ায়, তাহলে ব্যক্তিদের কাছে আবার কম নিষ্পত্তিযোগ্য আয় থাকে। বিপরীত পক্ষে, মার্কেটে চাহিদা কম থাকবে, যা তাত্ত্বিকভাবে মুদ্রাস্ফীতিকে হ্রাস করবে। তবে, উপায় হিসেবে এটিকে গ্রহণ করা বিপজ্জনক, কারণ জনসাধারণ উচ্চ করের প্রতি প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।


মূল্য সূচক দিয়ে মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ করা

সুতরাং আমরা মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলা করার উপায়গুলোর একটি রূপরেখা দিয়েছি, কিন্তু আমরা আসলে কিভাবে জানব যে এটিকে মোকাবেলা করার জন্য কোনটি জরুরি ব্যাপার? প্রথমত, স্পষ্টতই, এটিকে পরিমাপ করা দরকার। সাধারণত, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি সূচক অনুসরণ করে এটি করা হয়। অনেক দেশে, একটি ভোক্তা মূল্য সূচক (বা CPI) ব্যবহার করে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাপ করা হয়।

CPI-এ পরিবারগুলোতে কেনা একগুচ্ছ আইটেম ও পরিষেবার মূল্য নির্ণয়ে একটি ভারিত গড় ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্যের মূল্য বিবেচনায় নেওয়া হয়। এটি খুবই ঘনঘন করা যেতে পারে এবং স্কোরটিকে অতীতেরগুলোর সাথে তুলনা করা যেতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরো (BLS)-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের হিসাব যতটা সম্ভব নির্ভুল হওয়া নিশ্চিত করতে সারা দেশের দোকানগুলো থেকে এই ডেটা সংগ্রহ করে। 

আপনি আপনার হিসাবের "ভিত্তি বছরের" জন্য 100 এর CPI স্কোর দেখতে পারেন এবং তারপরে দুই বছর পরে 110 স্কোর দেখতে পারেন। তারপর আপনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন যে, দুই বছরে, দাম 10% বেড়েছে।

শেষ বিচারে অল্প পরিমাণ মুদ্রাস্ফীতি খারাপ কিছু নয়। আজকের ফিয়াট মুদ্রা সিস্টেমে এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা এবং এটি কিছুটা উপকারী কারণ এটি ব্যয় করা এবং ঋণ নেওয়াকে উৎসাহিত করে। মুদ্রাস্ফীতির হারের উপর নিবিড়ভাবে নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে এটি অর্থনীতিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে তা নিশ্চিত করা যায়।


➟ ক্রিপ্টোকারেন্সিতে শুরু করতে চাইছেন? Binance-এ বিটকয়েন ক্রয় করুন!


মুদ্রাস্ফীতির সুবিধা-অসুবিধা

প্রথম নজরে, মুদ্রাস্ফীতিকে সম্পূর্ণভাবে এড়ানোর মতো কিছু বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটি আধুনিক অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে, তাই এটি বাস্তবে অনেক বেশি স্পর্শকাতর বিষয়। চলুন এর কিছু সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানা যাক।


মুদ্রাস্ফীতির সুবিধা

বর্ধিত ব্যয়, বিনিয়োগ, এবং ঋণ গ্রহণ

যেমনটি আমরা আগে বলেছি, স্বল্প হারের মুদ্রাস্ফীতি ব্যয়, বিনিয়োগ এবং ঋণ গ্রহণকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারে। পণ্য বা পরিষেবাকে তাৎক্ষণিকভাবে লুফে নেওয়ার প্রণোদনা সৃষ্টি হয়, কারণ মুদ্রাস্ফীতি ঘটলে একই পরিমাণ নগদ অর্থের ক্রয়ক্ষমতা ভবিষ্যতে হ্রাস পাবে।


বেশি লাভ

মুদ্রাস্ফীতি কোম্পানিগুলোকে তাদের পণ্য ও পরিষেবাকে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করতে প্ররোচিত করে, যাতে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করা যায়। তারা এই বৃদ্ধিগুলোকে ন্যায্যতা দিতে পারে, তবে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করার জন্য তারা দাম প্রয়োজনের তুলনায় কিছুটা বেশি বাড়িয়ে রাখতে পারে।


এটি বরং মুদ্রা সংকোচনের চেয়ে ভালো

নাম থেকেই অনুমান করতে পারছেন যে, মুদ্রা সংকোচন হলো মুদ্রাস্ফীতির বিপরীত, যেখানে সময়ের সাথে সাথে দাম কমে যায়। যেহেতু দাম কমে, তাই গ্রাহকদের কাছে বিলম্বিত ক্রয়কে বেশি উপযুক্ত বলে মনে হয়, কারণ তারা অদূর ভবিষ্যতে আরো ভালো দামে পেতে পারে। এটি অর্থনীতিতে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ পণ্য ও পরিষেবার জন্য তেমন চাহিদা থাকে না। 

ঐতিহাসিকভাবে, মুদ্রাস্ফীতির সময়কালে বেকারত্বের উচ্চ হার এবং ব্যয়ের পরিবর্তে সঞ্চয়ের দিকে আগ্রহ দেখা যায়। যদিও ব্যক্তির জন্য শেষ বিচারে এটি খারাপ কিছু নয়, তবুও মুদ্রাস্ফীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করে।


মুদ্রাস্ফীতির অসুবিধা

মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং হাইপারইনফ্লেশন

মুদ্রাস্ফীতির সঠিক হার বের করা কঠিন, এবং এটি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে বিপর্যয়কর পরিণতি হতে পারে। শেষ পর্যন্ত, এটি লোকজনের গচ্ছিত সম্পদের অবমূল্যায়ন ঘটায়: আপনি যদি আজ আপনার তোষকের নিচে নগদ $100,000 গচ্ছিত রাখেন, তাহলে দশ বছর পরে সেটির ক্রয় ক্ষমতা একই থাকবে না।

উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি হাইপারইনফ্লেশনের দিকে নিয়ে যেতে পারে, এবং এক মাসে 50% এর বেশি বেড়ে গেলে সেটি ঘটতে পারে। যে মৌলিক প্রয়োজনের জন্য এক সপ্তাহ আগে মাত্র $10 খরচ করলেই চলতো সেটির জন্য $15 খরচ করা কোনো কাজের কথা হতে পারে না, যেটি কম ক্ষেত্রেই সেখানে থেমে থাকে। হাইপারইনফ্লেশনের সময়কালে, দাম প্রায়ই 50% হার অতিক্রম করে যায়, যা মূলত মুদ্রা ব্যবস্থা এবং অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলে।


অনিশ্চয়তা

মুদ্রাস্ফীতির হার বেশি হলে অনিশ্চয়তা বহাল থাকতে পারে। ব্যক্তি এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থনীতি কোন দিকে যাচ্ছে তা নিয়ে অনিশ্চিত থাকে, তাই তারা তাদের অর্থের বিষয়ে আরো সতর্ক থাকবে – যার ফলে কম বিনিয়োগ এবং কম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে।


সরকারি হস্তক্ষেপ

কেউ কেউ মুক্ত-বাজার নীতির উল্লেখপূর্বক সরকারের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার ধারণার বিরোধিতা করেন। তাদের যুক্তি হলো, সরকারের "নতুন টাকা ছাপানোর" ক্ষমতা (অথবা Brrrrr, ক্রিপ্টোকারেন্সি সার্কেলে সবার কাছে পরিচিত) প্রাকৃতিক অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে দুর্বল করে।


শেষ কথা

মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব এমন যে আমরা সময়ের সাথে সাথে দাম বৃদ্ধি প্রত্যক্ষভাবে দেখতে থাকি, যার ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। এটি এমন একটি ঘটনা যা আমরা মেনে নিতে অভ্যস্ত হয়েছি – সর্বোপরি, এটি যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহলে মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতির জন্য উপকারী হতে পারে।

আজকের বিশ্বে, নমনীয় রাজস্ব ও আর্থিক নীতিগুলোর মধ্যেই সর্বোত্তম প্রতিকার রয়ে গেছে, যা মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারগুলোকে ক্রমবর্ধমানভাবে খাপ খাওয়ানোর সুযোগ করে দেয়। তবে, এই নীতিগুলো খুব সাবধানে প্রয়োগ করতে হবে, অন্যথায় সেগুলো অর্থনীতির আরো ক্ষতির কারণ হতে পারে।