আর্থিক ঝুঁকির ব্যাখ্যা
হোম
নিবন্ধ
আর্থিক ঝুঁকির ব্যাখ্যা

আর্থিক ঝুঁকির ব্যাখ্যা

প্রকাশিত হয়েছে Oct 28, 2019আপডেট হয়েছে Feb 9, 2023
6m

আর্থিক ঝুঁকি কী?

সংক্ষেপে, আর্থিক ঝুঁকি হলো অর্থ বা মূল্যবান অ্যাসেট হারানোর ঝুঁকি। ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটের পরিপ্রেক্ষিতে, ট্রেডিং বা বিনিয়োগ করার সময় কেউ যে পরিমাণ অর্থ হারাতে পারে সেই পরিমাণকে আমরা ঝুঁকি হিসেবে নির্ধারণ করতে পারি। সুতরাং, ঝুঁকি প্রকৃত লোকসান নয়, তবে শেষ পর্যন্ত কী লোকসান হতে পারে তা।

অন্যভাবে বললে, অনেক আর্থিক পরিষেবা বা লেনদেনে ক্ষতির অন্তর্নিহিত ঝুঁকি থাকে এবং একে আমরা আর্থিক ঝুঁকি বলি। বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে, ধারণাটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে, যেমন ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেট, ব্যবসায় প্রশাসন এবং পরিচালনা সংস্থা। 

আর্থিক ঝুঁকির মূল্যায়ন এবং মোকাবেলা করার প্রক্রিয়াটিকে প্রায়শই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় যাওয়ার আগে আর্থিক ঝুঁকি এবং এর বিভিন্ন ধরণ সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

আর্থিক ঝুঁকির শ্রেণীবিভাগ এবং এটিকে সংজ্ঞায়িত করার একাধিক উপায় রয়েছে। উল্লেখযোগ্য উদাহরণের মধ্যে বিনিয়োগ ঝুঁকি, অপারেশনাল ঝুঁকি, পরিপালন ঝুঁকি এবং সিস্টেমিক ঝুঁকি অন্তর্ভুক্ত।


আর্থিক ঝুঁকির ধরণ

যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে যে আর্থিক ঝুঁকিগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে এবং প্রেক্ষাপটের উপর নির্ভর করে তাদের সংজ্ঞাগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে আলাদা হতে পারে। এই নিবন্ধতে বিনিয়োগ, অপারেশনাল, পরিপালন এবং সিস্টেমিক ঝুঁকির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে।


বিনিয়োগ ঝুঁকি

নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে বিনিয়োগ ঝুঁকিগুলো বিনিয়োগ ও ট্রেডিং কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত। বিনিয়োগ ঝুঁকির একাধিক রূপ রয়েছে, তবে তাদের অধিকাংশই মার্কেট মূল্যের ওঠানামার সাথে সম্পর্কিত। আমরা বিনিয়োগ ঝুঁকি গ্রুপের অংশ হিসেবে মার্কেট, তারল্য এবং ক্রেডিট ঝুঁকি বিবেচনা করতে পারি।


মার্কেট ঝুঁকি

মার্কেটের ঝুঁকি হলো কোনো অ্যাসেটের মূল্যের ওঠানামার সাথে সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি। উদাহরণস্বরূপ, যদি অ্যালিস বিটকয়েন কিনে, সে মার্কেটের ঝুঁকির অধীনে থাকবে কারণ অস্থিরতার কারণে মূল্য কমে যেতে পারে। 

বিটকয়েনের মূল্য তার পজিশনের বিপরীতে চলে গেলে অ্যালিস কতটা হারাতে পারে তা বিবেচনা করে মার্কেট ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা শুরু হয়। পরবর্তী পদক্ষেপটি হলো একটি কৌশল তৈরি করা যা নির্ধারণ করবে যে মার্কেটের গতিবিধির প্রতিক্রিয়ায় অ্যালিসের কীভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

সাধারণত, বিনিয়োগকারীরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় মার্কেটের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। প্রত্যক্ষ মার্কেটের ঝুঁকি কোনো অ্যাসেটের মূল্যের প্রতিকূল পরিবর্তনের ফলে একজন ট্রেডার যে লোকসানের সম্মুখীন হতে পারে তার সাথে সম্পর্কিত। পূর্ববর্তী উদাহরণটি সরাসরি মার্কেটের ঝুঁকির চিত্র তুলে ধরেছে (মূল্য কমার আগে অ্যালিস বিটকয়েন কিনেছিলেন)।

অন্যদিকে, পরোক্ষ মার্কেট ঝুঁকি এমন কোনো অ্যাসেটের সাথে সম্পর্কিত যার একটি সেকেন্ডারি বা আনুষঙ্গিক ঝুঁকি রয়েছে (যেমন, কম স্পষ্ট)। স্টক মার্কেটে, সুদের হারের ঝুঁকি প্রায়শই স্টকের মূল্যকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে, যা এটিকে পরোক্ষ ঝুঁকিতে পরিণত করে।

উদাহরণস্বরূপ, বব যদি কোনো কোম্পানির শেয়ার কেনে তাহলে তার হোল্ডিংগুলো পরোক্ষভাবে সুদের হারের ওঠানামার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। ক্রমবর্ধমান সুদের হারের কারণে কোম্পানির বৃদ্ধি বা লাভজনক থাকা কঠিন হবে। তাছাড়া, উচ্চ হার অন্যান্য বিনিয়োগকারীদের তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিতে উৎসাহিত করবে। তারা প্রায়শই তাদের যে ঋণ মেইন্টেইন করা অধিক ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে সেগুলো পরিশোধের উদ্দেশ্যে এই অর্থ ব্যবহার করে।

যদিও এটি লক্ষণীয় যে সুদের হার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটকে প্রভাবিত করে। রেট পরোক্ষভাবে স্টককে প্রভাবিত করলেও এগুলো বন্ড ও অন্যান্য নির্দিষ্ট আয়ের সিকিউরিটির উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। সুতরাং, অ্যাসেটের উপর নির্ভর করে সুদের হারের ঝুঁকি একটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।


তারল্য ঝুঁকি

তারল্য ঝুঁকি হলো বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ীরা তাদের মূল্যের বড়সড় পরিবর্তন ছাড়া কোনো নির্দিষ্ট অ্যাসেট দ্রুত ক্রয় বা বিক্রয় করতে না পারার ঝুঁকি।

উদাহরণস্বরূপ, কল্পনা করুন যে অ্যালিস প্রতি 10 ডলারে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সির 1,000টি ইউনিট কিনেছেন। ধরা যাক মূল্য কয়েক মাস পরে স্থিতিশীল থাকে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিটি এখনও $10-এর আশেপাশেই ট্রেড করছে।

একটি উচ্চ-ভলিউম, তরল মার্কেটে অ্যালিস দ্রুত তার $10,000 ব্যাগ বিক্রি করতে পারে কারণ সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ ক্রেতারা প্রতিটি ইউনিটের জন্য $10 দিতে ইচ্ছুক। কিন্তু, মার্কেট যদি তরল হয় তাহলে প্রতি শেয়ারের জন্য $10 দিতে ইচ্ছুক এমন ক্রেতার সংখ্যা হবে খুবই কম। ফলে অ্যালিসকে সম্ভবত তার কয়েনগুলোর একটি ভাল পরিমাণ অনেক কম মূল্যে বিক্রি করতে হবে।


ক্রেডিট ঝুকি

কাউন্টারপার্টি ডিফল্টের কারণে ঋণদাতার অর্থ হারানোর ঝুঁকি হলো ক্রেডিট ঝুঁকি। উদাহরণস্বরূপ, বব যদি অ্যালিসের কাছ থেকে অর্থ ধার নেয় তাহলে সে ক্রেডিট ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। অন্য কথায়, এমন সম্ভাবনা রয়েছে যে বব অ্যালিসকে পে করবে না এবং এই সম্ভাবনাটিকেই আমরা ক্রেডিট ঝুঁকি বলি। বব ডিফল্ট হলে অ্যালিস টাকা হারাবে।

বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, কোনো দেশের ক্রেডিট ঝুঁকি অযৌক্তিক স্তরে চলে গেলে হলে অর্থনৈতিক সংকট ঘটতে পারে। বিশ্বব্যাপী ক্রেডিট ঝুঁকি সম্প্রসারণের কারণে গত 90 বছরের সবচেয়ে খারাপ আর্থিক সঙ্কট ঘটেছিল।

তখন, মার্কিন ব্যাংকগুলোর শত শত প্রতিপক্ষের সাথে মিলিয়ন মিলিয়ন অফসেটিং লেনদেন ছিল। লিম্যান ব্রাদার্স খেলাপি হয়ে গেলে বিশ্বব্যাপী ক্রেডিট ঝুঁকি দ্রুত প্রসারিত হয় যা একটি আর্থিক সংকট তৈরি করে যেটি মহামন্দার দিকে চলে যায়।


অপারেশনাল ঝুঁকি

অপারেশনাল ঝুঁকি হলো অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া, সিস্টেম বা পদ্ধতিতে ব্যর্থতার কারণে আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি। এই ব্যর্থতা প্রায়শই ইনিচ্ছাকৃত কারণে মানুষের ভুল বা ইচ্ছাকৃত প্রতারণামূলক কার্যকলাপ দ্বারা সৃষ্ট হয়। 

শক্তিশালী পদ্ধতি ও কার্যকর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করার পাশাপাশি অপারেশনাল ঝুঁকি প্রশমিত করার জন্য প্রতিটি কোম্পানিকে নিয়মিত নিরাপত্তা অডিট করতে হবে।

দুর্বলভাবে পরিচালিত কর্মচারীদের অসংখ্য ঘটনা ছিল যারা তাদের কোম্পানির ফান্ড দিয়ে অননুমোদিত ব্যবসা পরিচালনা করেছিল। এই ধরনের কার্যাবলীকে প্রায়শই রগ ট্রেডিং (Rogue Trading) বলা হয় এবং এটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির কারণ - বিশেষ করে ব্যাংকিং শিল্পের মধ্যে।

অপারেশনাল ব্যর্থতা বাহ্যিক ঘটনার কারণেও হতে পারে যা পরোক্ষভাবে একটি কোম্পানির কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে, যেমন ভূমিকম্প, বজ্রঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ।


পরিপালন সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি

পরিপালন ঝুঁকি এমন লোকসানের সাথে সংশ্লিষ্ট যা কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের আইন ও প্রবিধান অনুসরণ করতে ব্যর্থ হলে উদ্ভূত হতে পারে। এই ধরনের ঝুঁকি এড়াতে অনেক কোম্পানি নির্দিষ্ট পদ্ধতি গ্রহণ করে যেমন অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং (AML) এবং আপনার গ্রাহককে জানুন (KYC)

কোনো পরিষেবা প্রদানকারী বা কোম্পানি পরিপালন করতে ব্যর্থ হলে বন্ধ বা গুরুতর জরিমানার সম্মুখীন হতে পারে। অনেক বিনিয়োগ সংস্থা এবং ব্যাংক পরিপালনজনিত ব্যর্থতার (যেমন, বৈধ লাইসেন্স ছাড়া কাজ করা) কারণে মামলা ও নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে। ইনসাইডার ট্রেডিং এবং দুর্নীতিও পরিপালন ঝুঁকির প্রচলিত উদাহরণ।


পদ্ধতিগত ঝুঁকি

সিস্টেমিক ঝুঁকি একটি নির্দিষ্ট ইভেন্টের সম্ভাবনার সাথে সম্পর্কিত যা কোনো নির্দিষ্ট মার্কেট বা শিল্পে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, 2008 সালে লিম্যান ব্রাদার্সের পতন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গুরুতর আর্থিক সংকটের সূত্রপাত করেছিল যা অন্যান্য অনেক দেশকে প্রভাবিত করেছিল।

সিস্টেমিক ঝুঁকিগুলো একই শিল্পের শাখা কোম্পানিগুলোর মধ্যে শক্তিশালী পারস্পরিক সম্পর্ক দিয়ে প্রমাণিত হয়। যদি লিম্যান ব্রাদার্স ফার্মটি পুরো আমেরিকান আর্থিক ব্যবস্থার সাথে এতটা গভীরভাবে জড়িত না হতো তাহলে এর দেউলিয়াত্ব অনেক কম প্রভাব ফেলত।

সিস্টেমিক ঝুঁকির ধারণাটি মনে রাখার একটি সহজ উপায় হলো একটি ডমিনো ইফেক্ট কল্পনা করা যেখানে একটি টুকরা প্রথমে পড়ার কারণে অন্যান্য টুকরাগুলোও পড়ে যায়।

উল্লেখযোগ্যভাবে, মূল্যবান ধাতুর শিল্প 2008 সালের আর্থিক সংকটের পরে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, বৈচিত্র্য সিস্টেমিক ঝুঁকি হ্রাস করার একটি উপায়।


সিস্টেমিক বনাম সিস্টেম্যাটিক ঝুঁকি

সিস্টেমিক ঝুঁকিকে সিস্টেম্যাটিক বা অ্যাগ্রিগেট ঝুঁকির সাথে বিভ্রান্ত করা যাবে না। পরবর্তীটিকে নির্দিষ্ট করা কঠিন এবং এর ঝুঁকির মধ্যে অনেক কিছু সংশ্লিষ্ট - শুধুমাত্র আর্থিক নয়। 

সিস্টেম্যাটিক ঝুঁকি অনেকগুলো অর্থনৈতিক ও আর্থ-রাজনৈতিক কারণের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে, যেমন মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বড়সড় সরকারি নীতি পরিবর্তন।

মূলত, সিস্টেম্যাটিক ঝুঁকি এমন ঘটনাগুলোর সাথে সম্পর্কিত যা একটি দেশ বা সমাজকে একাধিক ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে কৃষি, নির্মাণ, মাইনিং, উৎপাদন, অর্থ এবং আরো অনেক ধরণের শিল্প অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। সুতরাং কম-সম্পর্কিত অ্যাসেটগুলোকে একত্রিত করে সিস্টেমিক ঝুঁকি হ্রাস করা গেলেও পোর্টফোলিওর বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে সিস্টেম্যাটিক ঝুঁকি হ্রাস করা যায় না।


শেষ কথা

এখানে আমরা বিনিয়োগ, অপারেশনাল, পরিপালন এবং সিস্টেমিক ঝুঁকিসহ অনেক ধরণের আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করেছি। বিনিয়োগ ঝুঁকি গ্রুপের মধ্যে আমরা মার্কেটের ঝুঁকি, তারল্য ঝুঁকি এবং ক্রেডিট ঝুঁকির ধারণাগুলো উপস্থাপন করেছি।

ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেটে ক্ষেত্রে ঝুঁকি সম্পূর্ণভাবে এড়ানো কার্যত অসম্ভব। কোনো ট্রেডার বা বিনিয়োগকারী যা করতে পারেন তা হলো এই ঝুঁকিগুলোকে কোনোভাবে প্রশমিত করা বা নিয়ন্ত্রণ করা। সুতরাং, প্রধান প্রধান কিছু আর্থিক ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে বোঝা কার্যকর একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল তৈরির দিকে একটি ভালো প্রাথমিক পদক্ষেপ।

পোস্ট শেয়ার করুন
একটি অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করুন
আজই একটি Binance অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে আপনার জ্ঞানের অনুশীলন করুন।