হোম
নিবন্ধ
ব্লকচেইনের ব্যবহারের ক্ষেত্রসমূহ: ইন্টারনেট অব থিংস (IoT)

ব্লকচেইনের ব্যবহারের ক্ষেত্রসমূহ: ইন্টারনেট অব থিংস (IoT)

প্রকাশিত হয়েছে Apr 16, 2019আপডেট হয়েছে Jun 9, 2023
5m

ইন্টারনেট অব থিংস কী?

1950-এর দশকে ডিজিটাল বিপ্লবের প্রথম দিন থেকে অনেক সংখ্যক যুগান্তকারী প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র কিছু কিছু ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও শিল্পটি খুব দ্রুত বিকাশ লাভ করে এবং অধিকাংশ অভিনব প্রযুক্তি ক্রমবর্ধমানভাবে ব্যাপক ও অ্যাক্সেসযোগ্য হয়ে ওঠে।

বিভিন্ন ধরনের উদ্ভাবনী ডিভাইসের (যেমন RFID চিপ, সেন্সর এবং ইন্টারনেট) একত্রিত হওয়া এবং তাদের বর্ধিত অ্যাক্সেসিবিলিটি অবশেষে ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) ধারণার জন্ম দিয়েছে। IoT প্রযুক্তি কম্পিউটার যুগের একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে চিহ্নিত করে যা এখন শুধুমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত হওয়ার চাইতে বেশি কিছু করার সুযোগ প্রদান করে।


IoT-এর ইতিহাস

IoT-এর প্রথম পরিচিত ব্যবহার MIT-এ ছিল যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদের কোলা ডিসপেনসার মেশিন নিরীক্ষণ এবং পুনঃস্টক করার জন্য সস্তা সেন্সর ব্যবহার করেছিল। IoT-এর দিকে আরো অগ্রগতি হয়েছিল 1994 সালের দিকে যখন রেজা রাজির একটি জার্নাল আর্টিকেল বাড়ি ও কারখানাকে স্বয়ংক্রিয় করার জন্য ডেটার চলমান প্যাকেট ধারণার প্রস্তাব করে। 

1990-এর দশকে, মাইক্রোসফট এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি কোম্পানি একই ধরনের ধারণা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করে এবং 2002 সাল থেকে অনেক মিডিয়া আউটলেট IoT-এর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা শুরু করে - যেমন কোনো মনিটরিং ইনফরমেশন সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় একে অপরের সাথে সংযুক্ত স্মার্ট ডিভাইসের ব্যবহার। তবুও, 2008-কে অনেকে IoT শিল্পের জন্মের অফিসিয়াল বছর হিসেবে বিবেচনা করে যখন মানুষের চেয়ে বেশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত ছিল।


IoT কীভাবে কাজ করে?

IoT প্রযুক্তি হলো মূলত একাধিক ফিজিকাল ডিভাইস ও বস্তুর ইন্টারনেটওয়ার্কিং এবং এতে সাধারণত কম্পিউটার এবং/অথবা ডিভাইসগুলোর সাথে যোগাযোগ করা সেন্সর ও নন-কম্পিউটিং ডিভাইসগুলোর একটি নেটওয়ার্ক থাকে। এর মধ্যে থার্মোস্ট্যাট, হার্ট রেট মনিটর, স্প্রিংকলার এবং বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। IoT প্রযুক্তির উদ্ভাবনগুলো রিমোট মনিটরিং, নিয়ন্ত্রণ, অটোমেশন এবং বিস্তৃত ডিভাইস ও সেন্সরের স্ট্যাটাস পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়, যা স্মার্ট হোম ও সেলফ-ড্রাইভিং গাড়িতে ব্যবহার করা যেতে পারে।


ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবহারের জন্য IoT

IoT প্রযুক্তি ব্যক্তিগত ও গার্হস্থ্য ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন উপায়ে স্থাপন করা যেতে পারে। সাধারণ উদাহরণগুলো হোম অটোমেশনের ধারণার সাথে সম্পর্কিত, যেখানে আলো, এয়ার কন্ডিশনার, হিটার এবং এমনকি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যবহারকে নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কয়েকটি ডিভাইস নিযুক্ত করা যেতে পারে। এই ডিভাইসগুলো স্মার্টওয়াচ এবং স্মার্টফোনের মতো অন্যান্য ব্যক্তিগত আইটেমগুলোর সাথেও সংযুক্ত হতে পারে, বা ডেডিকেটেড স্মার্ট হাবের সাথেও সংযুক্ত হতে পারে যেগুলোকে বিভিন্ন স্মার্ট হোম পণ্য (যেমন স্মার্ট টিভি এবং রেফ্রিজারেটর) সংযুক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

স্বয়ংক্রিয় বাড়িগুলোতে বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহায়ক প্রযুক্তি প্রদানের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে জীবনযাত্রার মান উন্নত করার সম্ভাবনা রয়েছে - বিশেষ করে যাদের দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ বা চলাফেরার সীমাবদ্ধতা রয়েছে তাদের জন্য। এতে রিয়েল-টাইম সেন্সর ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যা পরিবারের সদস্যদের সতর্ক করে যখন তাদের আত্মীয়ের হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয় বা যখন তারা পড়ে যায়। আরেকটি আকর্ষণীয় উদাহরণ হলো কোনো বিছানা দখল করা আছে কিনা তা শনাক্ত করতে স্মার্ট বিছানার ব্যবহার ও রোগীরা কখন তাদের বিছানা ছেড়ে চলে যায় তা ট্র্যাক করার জন্য কিছু হাসপাতাল এটি ইতোমধ্যে পরীক্ষা করছে।


কমার্শিয়াল এবং শিল্পে ব্যবহারের জন্য IoT

শিল্পে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু উদাহরণের মধ্যে পরিবেশগত অবস্থা যেমন তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুচাপ ও গুণমান ট্র্যাক করতে সেন্সরের ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। কৃষকদের গবাদি পশুর পানি বা খাবার শেষ হয়ে গেলে অথবা কোনো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ফুরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সচেতন করতে IoT ডিভাইসগুলো ট্র্যাক করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি সরবরাহ কোনো নির্দিষ্ট সীমার নিচে থাকলে তারা সেই পণ্যটির আরো অর্ডার দেওয়ার জন্য স্বয়ংক্রিয় মেশিন সেট করতে পারে।


সীমাবদ্ধতাসমূহ

ইন্টারনেট অব থিংস প্রচুর আকর্ষণীয় উদ্ভাবন নিয়ে আসে এবং নিশ্চিতভাবেই এখানে দীর্ঘ দিন থাকবে। তবে এর সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ব্যবসা ও বাড়ি উভয়ের জন্য IoT সিস্টেমের ব্যবহারে একটি সমস্যা হলো মনিটর এবং সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইসের সংখ্যা বৃদ্ধি (এবং তাদের অনেকগুলো ইন্টারনেট সংযোগের উপর নির্ভরশীল হতে পারে)। বাস্তবায়ন যথাযথ না হলে কোম্পানি ও বাড়ির মালিকদেরকে তাদের একাধিক ডিভাইস নিরীক্ষণ করার জন্য বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করে দেখতে হতে পারে। এটি Io-কে আরো বেশি সময়সাপেক্ষ এবং সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে কম আকর্ষণীয় করে তুলবে। 

এই কারণে, অ্যাপল এবং লেনোভোর মতো কিছু কোম্পানি, এমন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে যা ডিভাইসগুলোকে iOS পরিবেশে নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়, এমনকি ভয়েস কমান্ড ব্যবহারের মাধ্যমেও। অন্যান্য IoT প্ল্যাটফর্মগুলো ইন্টারনেট বা ওয়াইফাই অ্যাক্সেস থেকে স্বাধীন হাবের চারপাশে কাজ করে। এগুলোর উদাহরণ হলো Amazon-এর Echo এবং Samsung-এর SmartThings Hub। সুতরাং, একটি সেন্সরের সাথে সংযুক্ত ডিভাইসগুলোর দ্বারা IoT কাজ করে যা প্রায়শই ইন্টারনেটের সাথে বা অন্য ওয়াইফাই রিসিভারের সাথে সংযুক্ত থাকে, যা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ, প্রোগ্রামিং এবং পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়।


IoT ক্রিপ্টোকারেন্সি

অনেক IoT সিস্টেমের ডিজিটাল বস্তুর মধ্যে আর্থিক ক্ষুদ্র লেনদেনের উপর নির্ভরশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর জন্য IoT ডিভাইসগুলোকে এমনভাবে সংযুক্ত করতে হবে যা মেশিন-টু-মেশিন (M2M) অর্থনীতিকে সম্ভব করে - যা মূলত নন-হিউম্যান ডিভাইসের মধ্যে অর্থ বিনিময়। এই ধরনের প্রেক্ষাপটে, IoT-কম্প্যাটিবল মুদ্রার চাহিদা বাড়ছে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি অবশ্যই একটি কার্যকর বিকল্প।

মাইক্রোপেমেন্টের জন্য উপযুক্ত ও ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়ায় প্রথমে অনেকে বিশ্বাস করেছিলেন যে ব্লকচেইন নিজেই M2M অর্থনীতির জন্য মৌলিক কাঠামো হবে। তবে, প্রতি সেকেন্ডে কত লেনদেন পরিচালনা করতে পারে তা অনুযায়ী অনেক ব্লকচেইন নেটওয়ার্কের পারফরম্যান্স সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর মানে হলো যে অধিকাংশ প্রুফ অব ওয়ার্ক এবং প্রুফ অব স্ট্যাক ব্লকচেইন বাস্তবায়ন বর্তমানে স্কেলেবিলিটির সম্ভাবনাকে সীমিত করে দেয় যাতে করে এগুলো বৃহৎ স্কেলে M2M মাইক্রোট্রাঞ্জেকশন প্রক্রিয়া করার জন্য অনুপযুক্ত হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও, এটি উল্লেখ করা যায় যে অনেক ব্লকচেইন প্রজেক্ট স্কেলেবিলিটি সমাধানের দিকে কাজ করছে, যেমন বিটকয়েন লাইটনিং নেটওয়ার্ক এবং ইথেরিয়াম প্লাজমা


শেষ কথা

ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যাপকভাবে অটোমেশন, তত্ত্বাবধান এবং ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের জন্য সুযোগ প্রদান করবে যা অবশ্যই আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে উন্নত করবে ও বিভিন্ন শিল্পের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। ক্রিপ্টোকারেন্সি IoT বিপ্লবের একটি অংশ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে যা মাইক্রো লেনদেন এবং M2M অর্থনীতির জন্য ডিজিটাল অর্থ হিসেবে কাজ করবে। বর্তমানে, IoT শিল্পকে টার্গেট করা সীমিত সংখ্যক ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রজেক্ট থাকলেও প্রযুক্তি দ্রুত গতিতে অগ্রসর হওয়ার পরিক্রমায় আমরা সম্ভবত অদূর ভবিষ্যতে এমন আরো অনেক তৈরি হতে দেখবো।

পোস্ট শেয়ার করুন
একটি অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করুন
আজই একটি Binance অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে আপনার জ্ঞানের অনুশীলন করুন।