স্কেলেবিলিটি ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের উদ্বেগের একটি অন্যতম প্রধান বিষয়। সামর্থ্য ও গতির পরিপ্রেক্ষিতে নেটওয়ার্কের মুখোমুখি হওয়া বর্তমান সীমাবদ্ধতা এটিকে বিশ্বব্যাপী বৃহৎভাবে গৃহীত হতে বাধা তৈরি করে।
ইথেরিয়ামের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ভিটালিক বুটেরিন জোসেফ পুনের সাথে ইথেরিয়াম প্লাজমার প্রস্তাব করেন। ধারণাটি ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের স্কেলিং সমাধানের একটি কৌশল হিসেবে 2017 সালের আগস্টে জন্মগ্রহণ করে। থাডিউস ড্রাইজা এর সাথে জোসেফ পুনও লাইটনিং নেটওয়ার্কের ধারণার কথা বলেন যা 2015 সালে বিটকয়েনের জন্য প্রস্তাবিত একটি স্কেলিং সমাধান। যদিও প্লাজমা ও লাইটনিং নেটওয়ার্ক উভয়ই ব্লকচেইনের স্কেলিং সমাধান হিসেবে প্রস্তাবিত হলেও প্রতিটির নিজস্ব প্রক্রিয়া ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
এই নিবন্ধটি সংক্ষিপ্তভাবে ইথিরিয়াম প্লাজমার পরিচয় দিবে। তবে মনে রাখবেন যে প্লাজমা স্বতন্ত্র কোনো প্রজেক্ট নয়। এটি একটি অফ-চেইন স্কেলিং কৌশল বা স্কেলযোগ্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরির একটি কাঠামো যা বিভিন্ন গবেষণা গ্রুপ বা কোম্পানি স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে প্রয়োগ করতে পারে।
প্লাজমা কিভাবে কাজ করে?
ইথেরিয়াম প্লাজমার মূল ধারণা হলো সেকেন্ডারি চেইনের একটি ফ্রেমওয়ার্ক স্থাপন করা যা মেইন চেইনের (এই ক্ষেত্রে, ইথেরিয়াম ব্লকচেইন) সাথে যতটা সম্ভব কম যোগাযোগ করবে এবং যোগাযোগ করবে। এই ধরনের একটি কাঠামো ব্লকচেইন ট্রি হিসেবে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হচ্ছে যা অনুক্রমিকভাবে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে প্রধানটির উপরে অসংখ্য ছোট চেইন তৈরি করা যায়। এই ছোট চেইনগুলোকে প্লাজমা চেইন বা চাইল্ড চেইনও বলা হয়। মনে রাখবেন যে, সাইডচেইন এবং প্লাজমা চেইন একই রকম কিন্তু একই জিনিস নয়।
প্লাজমা স্ট্রাকচার স্মার্ট কন্ট্রাক্ট এবং মের্কেল ট্রি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে যা সীমাহীন সংখ্যক চাইল্ড চেইন তৈরি করতে সক্ষম করে - যা মূলত, প্যারেন্ট ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের ছোট কপি। প্রতিটি চাইল্ড চেইনের উপরে আরো চেইন তৈরি করা যেতে পারে এবং এটিই একটি গাছের মতো কাঠামো তৈরি করে।
মূলত, প্রতিটি প্লাজমা চাইল্ড চেইন হলো একটি কাস্টমাইজযোগ্য স্মার্ট কন্ট্রাক্ট যা বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে এককভাবে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা যেতে পারে। এর মানে হল যে চেইনগুলো সহাবস্থান করতে পারে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। অবশেষে, ব্যবসা ও কোম্পানিগুলোর জন্য প্লাজমা তাদের নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন উপায়ে স্কেলেবল সমাধানগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব করে তুলবে।
অতএব, প্লাজমা যদি সফলভাবে ইথেরিয়াম নেটওয়ার্কে বিকশিত হয় এবং প্রয়োগ করা হয়, তবে মূল চেইনে জট লাগার সম্ভাবনা কম হবে কারণ প্রতিটি চাইল্ড চেইন নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে একটি স্বতন্ত্র উপায়ে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হবে - যা প্রধান চেইনের লক্ষ্যের সাথে সম্পর্কিত নয়। ফলস্বরূপ, চাইল্ড চেইন মূল চেইনের সামগ্রিক কাজকে কমিয়ে দেবে।
ফ্রড প্রুফ
চাইল্ড চেইন ও রুট চেইনের মধ্যে যোগাযোগ ফ্রড প্রুফ দ্বারা সুরক্ষিত, তাই রুট চেইন নেটওয়ার্ক সুরক্ষিত রাখার জন্য ও ক্ষতিকর ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত।
প্রতিটি চাইল্ড চেইনের ব্লক যাচাইকরণের নিজস্ব প্রক্রিয়া ও নির্দিষ্ট ফ্রড প্রুফ বাস্তবায়ন রয়েছে যা বিভিন্ন কনসেনশাস অ্যালগরিদমের উপরে তৈরি করা যেতে পারে। সবচেয়ে প্রচলিত হলো প্রুফ অব ওয়ার্ক, প্রুফ অব স্ট্যাক এবং প্রুফ অব অথরিটি।
ফ্রড প্রুফ নিশ্চিত করে যে ক্ষতিকর কার্যাবলীর ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা অসৎ নোডগুলো রিপোর্ট করতে, তাদের ফান্ড রক্ষা করতে এবং লেনদেন থেকে প্রস্থান করতে পারে (যেখানে মূল চেইনের সাথে একটি মিথস্ক্রিয়া হয়)। অন্য কথায় ফ্রড প্রুফ এমন একটি প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয় যার মাধ্যমে কোনো প্লাজমা চাইল্ড চেইন তার প্যারেন্ট চেইন বা রুট চেইনের কাছে অভিযোগ দায়ের করে।
MapReduce
প্লাজমা হোয়াইটপেপার MapReduce গণনার একটি খুব আকর্ষণীয় প্রয়োগও উপস্থাপন করে। মূলত MapReduce হলো ফাংশনের একটি সেট যা একাধিক ডাটাবেস জুড়ে ডেটা সজ্জিত ও হিসাব করার জন্য অত্যন্ত দরকারী।
প্লাজমার প্রেক্ষাপটে এই ডাটাবেসগুলো হলো ব্লকচেইন ও চেইনের গাছের মতো কাঠামো যা MapReduce-কে চেইনের ট্রি-এর মধ্যে ডেটা যাচাইকরণকে সহজতর করার উপায় হিসেবে প্রয়োগ করার সুযোগ দেয় এবং এটি নেটওয়ার্কের কার্যকারিতাকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে।
গণ প্রস্থান সমস্যা
প্লাজমা নিয়ে উদ্বেগের প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো গণ প্রস্থান সমস্যা, যা এমন একটি দৃশ্যকে নির্দেশ করে যেখানে অনেক ব্যবহারকারী একই সময়ে তাদের প্লাজমা চেইন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, রুট চেইনকে প্লাবিত করে এবং নেটওয়ার্ক জট সৃষ্টি করে। এটি প্রতারণামূলক কার্যাবলী, নেটওয়ার্ক আক্রমণ অথবা প্লাজমা চাইল্ড চেইন বা চেইনগুলোর একটি গ্রুপ উপস্থাপন করতে পারে এমন অন্য যেকোনো ধরণের গুরুতর ব্যর্থতার দ্বারা ট্রিগার হতে পারে।
শেষ কথা
প্লাজমা মূলত একটি অফ-চেইন সলিউশন যা অসংখ্য ছোট চেইনের গাছের মতো কাঠামো তৈরি করে ইথেরিয়াম নেটওয়ার্কের সামগ্রিক কর্মক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে। এই চেইনগুলো মূল চেইনের কাজকে কমাবে যাতে করে প্রতি সেকেন্ডে আরো বেশি লেনদেন পরিচালনা করতে সক্ষম হবে।
প্লাজমা দ্বারা প্রস্তাবিত সংযুক্ত ব্লকচেইনের একটি অনুক্রমিক মডেলের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং বর্তমানে অসংখ্য গবেষণা গোষ্ঠী দ্বারা পরীক্ষা করা হচ্ছে। যথাযথ ডেভলপমেন্টের মাধ্যমে প্লাজমা সম্ভবত ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের কার্যকারিতা বাড়াবে এবং বিকেন্দ্রীভূত অ্যাপ্লিকেশন ডেপ্লয় করার জন্য একটি ভালো কাঠামো প্রদান করবে। তদুপরি, ভবিষ্যতে স্কেলেবিলিটি সমস্যা এড়ানোর উপায় হিসেবে ধারণাটি অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি নেটওয়ার্কগুলোর দ্বারাও গৃহীত ও প্রয়োগ করা হতে পারে।
ইথেরিয়াম প্লাজমা একটি ওপেন সোর্স প্রজেক্ট এবং পাবলিক রিপোজিটরি তাদের গিটহাবে পাওয়া যাবে। ইথেরিয়াম ছাড়াও বর্তমানে প্লাজমার সাথে কাজ করা অন্যান্য অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং গিটহাব রিপোজিটরি রয়েছে। কয়েকটি উদাহরণের মধ্যে রয়েছে OmiseGO, Loom Network এবং FourthStateLabs। আরো বিস্তারিত ও টেকনিক্যাল তথ্যের জন্য আপনি অফিসিয়াল প্লাজমা হোয়াইটপেপার বা LearnPlasma ওয়েবসাইট দেখতে পারেন।